বাংলাদেশের ৪০টি জেলা করোনাভাইরাস সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে আছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ১৪ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা ও রোগী শনাক্তের হার বিশ্লেষণ করে ডব্লিউএইচও তার সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে এই কথা জানিয়েছে।
যেসব জেলায় শনাক্তের হার ১০ শতাংশ বা তার বেশি সেগুলোকে সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে আছে বলে চিহ্নিত করেছে ডব্লিউএইচও। এ ছাড়া, শনাক্তের হার ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে হলে উচ্চ ঝুঁকি এবং পাঁচ শতাংশের কম হলে কম ঝুঁকিতে আছে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে অতি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে–
ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, রংপুর, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, নওগাঁ, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, মাগুরা, ফরিদপুর, যশোর, নড়াইল, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরিশাল, চাঁদপুর, ফেনী, শেরপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও খাগড়াছড়ি।
অন্যদিকে, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে–
ঢাকা, পঞ্চগড়, নীলফামারী, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ও রাঙ্গামাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সব বিভাগেই সাপ্তাহিক সংক্রমণের হার বেড়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে করোনা সংক্রমণের দিক থেকে শীর্ষ ৩১টি দেশের মধ্যে আছে।
সারা দেশে ১৪ দিন ‘শাট ডাউনের’ সুপারিশ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় দেশে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ণ ‘শাট ডাউনের’ সুপারিশ করেছে করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
বৃহস্পতিবার কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লার স্বাক্ষর করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। বুধবার রাতে কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানানো হয়।
করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি বলেছে, যেসব স্থানে পূর্ণ শাট ডাউন করা হয়েছে, সেখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। এ জন্য সারা দেশে ১৪ দিন সম্পূর্ণ শাট ডাউনের সুপারিশ করেছে কমিটি।
কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, শাট ডাউন মানে জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছুই বন্ধ রাখার কথা বোঝানো হয়েছে।
কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই সময়ে জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে যত প্রস্তুতিই থাকুক না কেন, স্বাস্থ্যব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে। বর্তমানে সারা দেশে বিধিনিষেধ চলছে, যা ১৫ জুলাই পর্যন্ত চলার কথা।
করোনায় মৃত্যু ৮১ জনের
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৮টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) করোনাভাইরাসে আগের দিনের চেয়ে মৃত্যু কমলেও শনাক্ত বেড়েছে। নতুন করে ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৫৮ জনের, যা গত ৭৪ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড।
আজ বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে গত বুধবার ৮৫ জনের মৃত্যু হয়। করোনা শনাক্ত হয়েছিল ৫ হাজার ৭২৭ জনের।
গত ২৪ ঘণ্টার চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত ১২ এপ্রিল। সেদিন করোনা শনাক্ত হয়েছিল ৭ হাজার ২০১ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আজকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৩০ হাজার ৩৯১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯৩।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বোঝার একটি নির্দেশক হলো রোগী শনাক্তের হার। কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্ত ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। পরে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। তারপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। গত বছরের শেষ দিকে এসে সংক্রমণ কমতে থাকে।
দেশে এ বছরের মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। পরে তা আরও দুই দিন বাড়ানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আরও কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয় । পরে তা আরও বাড়িয়ে ১৫ জুলাই পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু দেশে এখন সংক্রমণ পরিস্থিতি এপ্রিলের মতো ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। ভারত সীমান্তবর্তী ১৫টি জেলায় রোগী দ্রুত বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে ঢাকাকে সারা দেশ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ঢাকার আশপাশের চারটি জেলাসহ মোট সাতটি জেলায় জরুরি সেবা ছাড়া সব ধরনের চলাচল ও কার্যক্রম ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এই সাত জেলা হলো মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৯৫৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ