করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়া হয়েছে ইংরেজি ও আরবি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন পর্যন্ত কেবল বন্ধ রয়েছে বাংলা মাধ্যমের শিক্ষাপ্রদান। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর সব দায় যেন বাংলা শিক্ষামাধ্যমের কাঁধেই পড়েছে। কারণ এই একটি খাত ছাড়া দেশের বাকি প্রায় সবকিছুই খোলা।
গত আগস্ট মাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আরবি মিডিয়ামের কওমি মাদরাসা খোলার অনুমতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইংলিশ মিডিয়ামের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের অক্টোবর-নভেম্বর মাসের পরীক্ষাও গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে তারা। আগামী জানুয়ারিতে মেডিক্যাল ও ডেন্টালের পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু আট মাস ধরে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে বাংলা মাধ্যমের সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা। আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ছুটি বাড়ানো হয়েছে।
বাংলা মাধ্যমের চলমান ছুটি জানুয়ারি পর্যন্ত গড়াবে তা মোটামুটি ধরেই নিয়েছেন অভিভাবকরা। গত আট মাসেরও বেশি সময় এসব শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে পারেনি। শহরের নামি-দামি স্কুলের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করতে পারলেও মফস্বল ও দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আট মাস ধরেই পড়ালেখার বাইরে রয়েছে। বাংলা মাধ্যমের এসব শিক্ষার্থীর জন্য সামনে বড় সংকট অপেক্ষা করছে।
জানা যায়, দেশের কওমি মাদরাসাগুলোর সবাই প্রায় আবাসিক। কিন্তু তিন মাস ধরে মাদরাসাগুলো খুললেও করোনাজনিত কোনো বিপর্যয়ের কথা শোনা যায়নি। কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলকে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতিও দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেসব শর্ত মেনেই প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিলেও কারো করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে করোনার মধ্যেও ইংলিশ মিডিয়ামের পরীক্ষা নিয়মিত হচ্ছে। অন্যদিকে অনেকটাই পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা।
এরই মধ্যে চলতি বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাও এবার হচ্ছে না। কিন্তু সব শিক্ষার্থীকেই পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীতের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এতে শিক্ষার্থীরা ওপরের ক্লাসে উঠতে পারলেও তারা কতটুকু শিখতে পেরেছে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, ইউনেসকো বলছে, শিক্ষা থেমে থাকতে পারে না। আমাদের উচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে পরিকল্পনা করা, জরিপ করা, মতবিনিময় করা। পরীক্ষামূলকভাবে কিছু করে দেখতে হবে। সে ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা ভাবা যেতে পারে। এখন যদি পাঁচ বছর করোনা থাকে, তাহলে তো পাঁচ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যাবে না।
বাংলাদেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সভাপতি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, বিনোদন পার্ক পর্যন্ত খোলা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা কেউ ঘরে বসে থাকছে না। কওমি মাদরাসা খুলেছে। ইংলিশ মিডিয়ামের পরীক্ষা হচ্ছে। তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিন্ডারগার্টেন খুলতে বাধা কোথায়?’
গত বুধবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, ‘আগামী ১৪ নভেম্বরের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া যায় কি না তা নিয়ে সরকার ভাবছে। সংকটের মধ্যেও আমরা পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পেরেছি, তবে এটি আমাদের কোনো আদর্শ পরিস্থিতি নয়। সামনেই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আছে, সেগুলো নিয়েও আমরা বিভিন্নভাবে ভাবছি।’ কিন্তু এর এক দিন পরই বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।
Available for everyone, funded by readers. Every contribution, however big or small, makes a real difference for our future. Support to State Watch a little amount. Thank you.
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ