মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে কয়েক হাজার মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে প্রবেশ করছে। এর ফলে ভারতীয় কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, অঞ্চলটি মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী অ্যাক্টিভিস্টদের সক্রিয়তার মঞ্চ হয়ে উঠতে পারে এবং অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয় মিজোরাম, মনিপুর ও নাগাল্যান্ডে বর্তমানে মিয়ানমারের প্রায় ১৬ হাজার মানুষ অবস্থান করছে। নাগরিক সমাজ ও সরকারি কর্মকর্তাদের ধারণা, আগামী কয়েক মাসে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন মিজোরামে। এখানে গণতন্ত্রপন্থী যোদ্ধাদের ওপর কড়া নজর রাখছে কর্তৃপক্ষ।
রাজ্য সরকারের এক উপদেষ্টা বলেন, ‘বিষয়টি আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি’। তিনি জানান, ‘বেশ কিছু দিন আগে স্থানীয় ভারতীয়দের সহযোগিতায় মিয়ানমারের কয়েকজন যোদ্ধা সীমান্ত অতিক্রম করেছিলেন। কিন্তু পরে তারা ফিরে গেছেন। আমরা মিজোরামে তাদের প্রশিক্ষণ বিষয়ে কোনো অনুমোদন দেব না।’ রাজ্যের এক পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রতিরোধ সংগ্রামের এক সদস্য জানান, মে মাসের শুরুতে মিয়ানমারের অন্তত ৫০ জন মানুষ মিজোরামে একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তুলেছিল। চাম্পাই জেলায় স্থাপিত ক্যাম্পটিতে অস্ত্রের ব্যবহার ছিল না। ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর তল্লাশির পর ক্যাম্পটি পরিত্যক্ত হয়। ক্যাম্পের সবাই মিয়ানমারে ফিরে যায়।
অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া অং সান সু চি’র দল এনএলডির এক আইনপ্রণেতা জানান, চিন রাজ্যের কয়েকজন প্রতিরোধ যোদ্ধা ভারত ও আরাকান আর্মির কাছ থেকে অস্ত্র কিনেছেন। ভারতের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে দিল্লির শাসনবিরোধী গোষ্ঠীও দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় আছে। এই গোষ্ঠীগুলো সীমান্তের উভয় পারে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে মাদক বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করে এসব গোষ্ঠী। নয়া দিল্লিতে ভারত সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা যদি সীমান্ত পার হয় তাহলে বিষয়টি সত্যিকার উদ্বেগের। কারণ, এতে নাগা ও মনিপুরের বিদ্রোহীরা টিকে থাকার রসদ পাবে। মিয়ানমার-ভারত সীমান্তে কমপক্ষে দুই ডজন সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে বলে জানান তিনি।
লন্ডনের এসওএএস ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র লেকচারার অভিনাশ পালিওয়াল মনে করেন, মিয়ানমারের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সীমান্ত অতিক্রম ও সীমান্তে সংঘর্ষ তিন দশকের মধ্যে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সবচেয়ে ভয়াবহ নিরাপত্তা পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এতে মিয়ানমারের অভ্যুত্থান নেতাদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে। মিয়ানমারে ভারতের ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের বন্দর ও মহাসড়ক প্রকল্প ঝুঁকিতে পড়বে।
পালিওয়াল বলেন, পুরো কানেক্টিভিটি এজেন্ডা, চীনকে মোকাবিলায় ভারসাম্য বজায় রাখা, মাদক অপরাধ ও বিদ্রোহী দমন কৌশল জটিলতর হয়ে পড়েছে। উত্তর-পূর্বের অভিবাসন সংকট ভিন্ন, রাজনীতিকরণ বা সামরিক রূপ নিতে পারে ভবিষ্যতে।
মিজোরাম কর্তৃপক্ষ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিতভাবে আটটি শরণার্থী শিবির স্থাপনে সহযোগিতা চেয়েছে। প্রতিবেশী মনিপুরে অস্থায়ী শিবিরে প্রায় ১ হাজার শরণার্থী অবস্থান করছে।
মনিপুরভিত্তিক মানবাধিকার কর্মী বাবলু লইটঙ্গবাম ও মিয়ানমারের নাগা স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনের এক সদস্য জানান, সীমান্ত এলাকাগুলোতে খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে চালের সরবরাহ কমে গেছে।
লইটঙ্গবাম বলেন, সহিংসতা ছাড়াও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের অর্থনীতি নিম্নগামী। ফলে আরও মানুষ ভারতে আসবে। মানুষকে বেঁচে থাকার উপায় বের করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৪৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ