প্রাণঘাতী রোগ করোনায় দৈনিক মৃত্যুর হিসেবে ফের রেকর্ড করেছে ভারত। বুধবার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬ হাজার ১৩৮ জন। গত মার্চ থেকে ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকেই সেখানে প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছিল করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এর ধারাবাহিকতায় গত মে মাসে এক দিনে সাড়ে ৪ হাজার করোনা রোগীর মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ডও করে ফেলে দেশটি।
বুধবার সেই পুরোনা রেকর্ডকে অতিক্রম করল ভারত। তবে এই দিন দেশে করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখের নিচে- ৯৩ হাজার ৮৯৬ জন। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিহার রাজ্যে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণেই এই দুঃখজনক রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়েছে ভারত।
তারা বলেন, প্রতিদিন ভারতের ২৭ টি রাজ্যের রাজ্য সরকার তাদের নিজ নিজ স্বাস্থ্য দফতর থেকে করোনায় দৈনিক আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠিয়ে থাকে। বুধবারও সেই অনুযায়ীই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তথ্য পাঠিয়েছিল রাজ্য সরকারগুলো।
কিন্তু পরে জানা গেছে, বিহারে বুধবার করোনায় মৃতের যে সংখ্যা নীতিশ কুমারের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার পাঠিয়েছে, সেখানে ৩ হাজার ৯৫১ জন মৃতের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। পরে তালিকা সংশোধন করে পুনরায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তা পাঠিয়েছে বিহারের রাজ্য সরকার।
বেড়েছে আক্রান্ত ও মৃত্যু
টানা কিছুদিন নিম্নমুখি প্রবণতার পর বিশ্বজুড়ে ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। বুধবার (১০ জুন) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৩ হাজার ৬৫৬ জন এবং এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ১৩ হাজার ৪০৪ জন।
এর আগের দিন মঙ্গলবার বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ২৪ জন এবং নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭৬। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৬৩২ এবং নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৫৭ হাজার ৪২৮ জন।
বুধবার করোনায় নতুন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার হিসেবে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে ভারত ও ব্রাজিল। দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর এই তালিকায় তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছে দক্ষিণ আমেরিকার অপর দুই দেশ আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া।
মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৭ কোটি ৫১ লাখ ৫৬ হাজার ৬১৮ জন এবং এ পর্যন্ত এই রোগে মারা গেছেন মোট ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার ২৩৯ জন। এই মুহূর্তে বিশ্বে সক্রিয় করোনা রোগী আছেন ১ কোটি ২৭ লাখ ১৯ হাজার ৬৫ জন।
সক্রিয় করোনা রোগীদের মধ্যে মৃদু উপসর্গ বহন করছেন ১ কোটি ২৬ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪০ জন এবং গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আছেন ৮৫ হাজার ৩২৫ জন। তবে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের সংখ্যাও কম নয়। বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন মোট ১৫ কোটি ৮৬ লাখ ৬১ হাজার ৩১৪ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটে উহানে। চীনের স্বাস্থ্য বিভাগ সে সময় জানিয়েছিল মৃত ওই ব্যক্তি ‘অপরিচিত ধরনের’ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
শনাক্তের এক মাসের মাথায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা দেওয়ায় ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে ‘জরুরি পরিস্থিতি’ ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিন্তু তাতেও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় অবশেষে ওই বছর ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা দেয় ডব্লিউএইচও।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪১৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ