জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংক্রান্ত সব সেবা প্রদানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তরিত হতে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ১৭ মে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠির অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) পাঠানো হয়েছে।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব হুমায়ুন কবির খন্দকার গতকাল গণমাধ্যমকে পিএমও থেকে সোমবারে ইস্যু হওয়া চিঠিটির অনুলিপি পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
পিএমও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছে। বেশ কিছু আইন ও নিয়মকানুন বদলাতে হবে এবং এরপর দায়িত্বগুলো আমাদেরকে কাছে স্থানান্তর করা হবে গতকাল বলেছেন মোকাব্বির হোসেন।
হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, তিনি মঙ্গলবার বিকেলে চিঠিটির অনুলিপি পেয়েছেন। আমরা এ বিষয়টিকে শিগগিরই পর্যালোচনা করব। ইসি দায়িত্ব পরিবর্তনের বিষয়টি জানত কি না, জানতে চাইলে হুমায়ুন বলেন, আমি এর (চিঠি পাওয়ার) আগে এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতাম না।
ইসির উদ্বেগ
বিদ্যমান জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনে নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার ক্ষমতা ও এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা তথ্য-উপাত্ত সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজনের কাজও ইসির অধীন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করে আসছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলে সেই কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে চলে যাবে। অথচ ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ অনুসারে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত বা মৃতদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার এখতিয়ার ইসির হাতেই থাকবে। বর্তমানে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তি ও জাতীয় পরিচয় সংক্রান্ত সেবা একই সার্ভার থেকে দিয়ে আসছে ইসি।
ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত ও বিতরণসংক্রান্ত কাজে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। নতুনভাবে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার হস্তান্তরিত হলে ওই প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো গড়ে তোলা, নতুনভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত, লজিস্টিক ব্যবস্থাপনাসহ নানা কাজে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। সরকারি অর্থ সাশ্রয়ের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজের ধারা বর্তমানে যেভাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলমান, সেভাবে রাখা প্রয়োজন।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচন কমিশনারের কাছে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে তাদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কথা জানিয়ে এনআইডির দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের কাছে রাখতেই পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। একই সঙ্গে অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে এনআইডির সেবার কাজ হস্তান্তর করা হলে ব্যাপক অর্থ ব্যয়ের আশঙ্কার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা স্মারকলিপিতে কয়েকটি প্রশ্নও উত্থাপন করেছেন। প্রশ্নগুলো হলো :
১. জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নতুনভাবে ডাটা কিভাবে সংগ্রহ করবে, নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার সার্ভার অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর আইনসংগত হবে কি না।
২. নির্বাচন কমিশনের ভোটারদের ডাটা সংগ্রহ ও অন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করে নতুনভাবে সার্ভার স্থাপন, নাগরিকদের তথ্য ও পরিচিতি সংক্রান্ত একই কাজের জন্য নির্বাচন কমিশন ও অন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক একাধিক সার্ভার প্রস্তুত, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাড়ানো কতটা যুক্তিসংগত।
৩. যদি একই কাজের দ্বৈততা পরিহারের জন্য নাগরিকদের তথ্য অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান সংগ্রহ করে থাকে এবং এর ভিত্তিতে ভোটার তালিকা তৈরির জন্য ওই প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে ডাটা সরবরাহ করতে সম্মত হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ডাটা নিয়ে ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা কতটা আইনসংগত এবং ওই ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন করলে জনগণের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে কি না।
৪. যেসব প্রতিষ্ঠান জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবাসংক্রান্ত বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, তাদের সেবা প্রদান বিঘ্নিত হবে কি না।
নির্বাচন কর্মকর্তারা এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় পরিচয়পত্রের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং আরো দ্রুত কিভাবে এই সেবা দেওয়া যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনারদের কাছে আবেদন জানিয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ