ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে স্বাভাবিক করে দেয়া হয়েছে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ফেরি চলাচল। সোমবার বিকেল ৬টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) মাওয়া শিমুলিয়া ঘাট ম্যানেজার (বাণিজ্য) সাফায়াত হোসেন। এদিকে ঈদ সামনে রেখে করোনার ঝুঁকি নিয়ে মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামের পথে ছুটে যাচ্ছেন। এতে পথে যে পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাভাবিক হলো ফেরি চলাচল
ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে স্বাভাবিক করে দেয়া হয়েছে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ফেরি চলাচল। বিধিনিষেধের কারণে রাতে মালবাহী যানের জন্য ফেরি চলাচল করে। আর দিনে শুধু লাশবাহী যান, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানের জন্য অল্প কিছু ফেরি বরাদ্দ করা আছে। কিন্তু ঈদে ঘরমুখী মানুষ বিশেষ প্রয়োজনে চলাচলকারী ফেরিগুলোতে হুড়মুড়িয়ে উঠে যাচ্ছেন। এ জন্য সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) সংস্থার চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম।
তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, লাশের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপারের সময় যেভাবে মানুষ হুড়মুড়িয়ে উঠে যাচ্ছেন, তাতে জরুরি প্রয়োজনের যান আটকা পড়ে যাচ্ছে। এ জন্যই যে ঘাটে প্রয়োজন মনে হবে, সেখানে দু-একটা ফেরি বাড়তি চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রধান যাতায়াত হয় পদ্মার দুই ফেরিঘাট হয়ে। এগুলো হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার এবং মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, বর্তমানে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে ১৬টি ফেরি সচল। এর মধ্যে লাশবাহী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি প্রয়োজনের গাড়ির জন্য তিনটি ফেরি দিনে চলাচল করে। আর রাতে প্রয়োজন অনুযায়ী মালবাহী ফেরি চলে। গত রোববার ঘরমুখী মানুষের চাপ বেড়ে যাওয়ায় ৩৫টি লাশবাহী গাড়ি ঘাটে আটকা পড়ে। জরুরি ফেরিগুলো দিয়ে লাশ পরিবহন করতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরমুখী মানুষও উঠে যাচ্ছেন। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে প্রয়োজন অনুসারে ফেরি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি আছে ১৭টি। ওই পথেও দিনে দু-তিনটি ফেরি জরুরি প্রয়োজনে চলাচল করত। মানুষের চাপ বেড়ে যাওয়ায় ফেরি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, মানুষের চাপ বেড়ে যাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। ঘাটে যারা ভিড় করছেন, এর বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করেই ফেরি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা
রোববার এক অনলাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অন্যতম মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম বলেন, চলতি মাসের প্রথম দিন থেকে টানা ৯ দিন ধরে পরীক্ষার বিপরীতে করোনার সংক্রমণ শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এতে আত্মতুষ্টির কারণ নেই।
নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা সবার প্রচেষ্টায় যে জায়গায় এসেছি, এখানে যদি শিথিলতা দেখানো হয়; গাদাগাদি করে যদি মানুষ এভাবে ভ্রমণ করতে থাকে, তাহলে ঈদের পরে পরিস্থিতি যেকোনো সময় ভালো থেকে খারাপের দিকে চলে যেতে পারে। এই আশঙ্কা আমাদের আছে। আর আছে বলেই বিধিনিষেধের ওপর বারবার জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
তিনি জানান, দেশে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে সারা দেশে উদ্বেগ আছে। ভয় না পেয়ে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করা গেলে বর্তমানের স্থিতিশীল অবস্থা ধরে রাখা সম্ভব হবে। ভারত থেকে আসা ব্যক্তিদের কঠোরভাবে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।
করোনার ঝুঁকি নিয়েই বাড়ির পানে ছুটছে হাজার হাজার মানুষ। ব্যাপক নজরদারির মধ্যেও ফেরিতে উঠতে মরিয়া যাত্রীরা। রাত বাড়তেই ঘাটে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়ে কয়েকগুণ। যে কোন উপায়ে ফেরিতে ওঠার চেষ্টা তাদের। বিজিবিও ঠেকাতে পারছে না জনস্রোত।
বুয়েটের অধ্যাপক ড সামছুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিধিনিষেধ না মেনে ঈদযাত্রায় যাত্রীরা কী করতে পারেন সেটা আমাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কি আঁচ করতে পারেননি? আগাম ব্যবস্থা কি নেওয়া যেত না? বর্তমান অবস্থায় করোনা সংক্রমণ কমার পরিবর্তে বাড়ার আশঙ্কাই বেশি হলো।’
করোনাকালে মানুষের এমন যাতয়াতের প্রভাব কী হবে- জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই এই লকডাউন, কিন্তু এর মধ্যে যদি যাতায়াত বেড়ে যায়, তাহলে তো কিছুই হলো না। এতে করে গ্রামে গ্রামে আরও নতুন সংক্রমণ ছড়াবে। আমি মনে করি, সংক্রামক ব্যধি মোকাবিলার প্রস্তুতির মূল কাজ হলো সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া। কারণ, রোগীর সংখ্যা কমাতে না পারলে হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা যতই বাড়ানো হোক কাজ হবে না।’
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০৩৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ