করোনার টিকা সংগ্রহে স্বেচ্ছাচারিতা ও নতুন অনিশ্চয়তার সংবাদ আবারও সমগ্র জাতিকে গভীর হতাশা ও দুশ্চিন্তায় নিমজ্জিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রথম থেকেই ভারতের বিকল্প সূত্র থেকেও টিকা কেনার পরিকল্পনা নিলে আজ এ নিদারুণ অনিশ্চয়তায় পড়তে হতো না। আমরা প্রথম থেকেই এ কথাই বলে আসছিলাম। অবিলম্বে অন্য সূত্র হতে পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহের দাবি জানান তিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ও সুপরিকল্পিত নীতি প্রণয়ন না করার কারণে বিভিন্ন সময় যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা ইতিমধ্যে অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। চলমান লকডাউনের নামে শাটডাউন অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের সর্বশেষ উদাহরণ। এবারকার লকডাউনে মানুষের দুরবস্থা চরম আকার ধারণ করেছে। এর মূলে দুটি কারণ, একটি রাজনৈতিক, অন্যটি অর্থনৈতিক। লকডাউনের নামে মূলত সরকার বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনকারী আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন ঘোষণা করেছে। লকডাউনের শুরুর দিন থেকেই সারা দেশে ব্যাপকভাবে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামাসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের শত শত নেতা-কর্মীকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত ১৭ মাসের এই দীর্ঘ সময়েও করোনা প্রতিরোধে ন্যূনতম ব্যবস্থাপনা কৌশল গড়ে তুলতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার। প্রথমবার করোনার প্রকট অজানা থাকার কারণে সম্যক প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি বলে দাবি করা হয়। কিন্তু এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় তো আর তা বলা যাবে না। বিগত এক বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আগাম সমন্বিত বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা বা একটি কার্যকরী রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’
বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অনেক বিলম্বে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকার আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের অনেক সময় পেয়েছিল। কিন্তু তারা তা করেনি। সরকার এ সময় শতবার্ষিকী উদযাপনসহ নানা জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানমালা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। করোনার মধ্যেই বিভিন্ন স্তরের নির্বাচন করা হলো। পর্যটনের ক্ষেত্রেও লোকজনকে সীমিত করা হলো না। এই অনির্বাচিত অবৈধ সরকার জনগণের কল্যাণের তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নেই ব্যস্ত ছিল বেশি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা খাতে গত এক বছরে সক্ষমতা বাড়েনি, বরং দুর্নীতি বেড়েছে। এ সময় দুর্নীতির সব সীমা অতিক্রম করেছে সরকার। ঢাকায় ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত করোনা ফিল্ড হাসপাতালটি কিভাবে উধাও হয়ে গেল, তা জনগণ জানতে চায়। মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটের একই ভবনে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চালুকৃত করোনা হাসপাতালটি অলস ও অব্যবহৃত রেখে একই ভবনে অন্য তলায় আড়ম্বরপূর্ণভাবে পুনরায় নতুন একটি করোনা হাসপাতাল চালু করার অর্থ কী, জনগণ জানতে চায়।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতের চরম অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির মহোৎসবের সঙ্গে সাম্প্রতিক এই দুর্নীতির কাহিনি সবাইকে হতবাক করেছে। যারা মনিটরিং করবে সেই শর্ষেই ভূত থাকলে দুর্নীতির কি কোনো পরিসীমা থাকে?’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নিষ্ঠুর জুলুম চলছে
এর আগে শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এ সরকার জনগণের নয়, সামান্যতম সমালোচনাও সহ্য করতে পারছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা নামে কালো আইনের মাধ্যমে জনগণের বাক-স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। জনরোষ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এই আইনটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ধারাবাহিক নিষ্ঠুর জুলুম করছে সরকার।
খুলনায় সাংবাদিক এবং ফেনী ও নোয়াখালীর চাটখিলে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি এ বিবৃতি দেন। এতে তিনি গ্রেপ্তারদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার, হয়রানি বন্ধসহ নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, জনগণকে বন্দি রেখে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতা জবরদখলকারী সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো নিবর্তনমূলক কালো আইন ব্যবহারের মাধ্যমে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। অনৈতিক সরকারের ব্যর্থতা, অযোগ্যতা, দমন-পীড়ন, গণতন্ত্র ও গণবিরোধী কার্যকলাপ এবং ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতি, লুটপাট, অনৈতিকতা, অনিয়ম, বেপরোয়া আচরণ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখির জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে লেখক, সাংবাদিক, কবি, কার্টুনিস্ট, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও তাদের ওপর ধারাবাহিক নিষ্ঠুর জুলুম চলছে।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক অধিকার খর্বের পর এখন এই কালো আইন ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে মানুষ নিজেদের কষ্ট ও ক্ষোভ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যক্ত করতে না পারে। যারা স্বাধীনভাবে গণমাধ্যমে নিজের মত প্রকাশের চেষ্টা করছে কিংবা বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী যারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে, তাদের জীবনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিষ্ঠুর কালাকানুনের মাধ্যমে নেমে আসছে ভয়ঙ্কর দুর্বিষহ পরিণতি।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৬৪৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ