ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছবি তোলার সময় ছাত্রলীগের হামলায় অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের ঢাবি প্রতিনিধি আবিদ হাসান রাসেল আহত হয়েছেন। সেসময় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ঢাকা ইউনিভারসিটি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ‘জেয়াফত’ নামে একটি কর্মসূচি দেয় ‘বাংলাদেশের জনগণ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। কর্মসূচি শুরুর আগে আন্দোলনকারীদের মারধর করে তাদের ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার ভিডিও ধারণের সময় ‘সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও’ রাসেলের ওপর হামলা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলায় নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি উৎপল দাস।
হামলা থেকে বাঁচতে রাসেল টিএসসির ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও টিএসসি গেট বন্ধ থাকায় সেখানে গিয়ে তাকে পেটান হামলাকারীরা। উপস্থিত অন্যদের তোলা ছবি থেকে হামলাকারীদের শনাক্ত করা যায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, ছাত্রলীগ নেতা রাকিব হাওলাদার। উপস্থিত চার-পাঁচ জন বাঁশের লাঠি দিয়ে রাসেলের মাথা, পিঠ ও ডানহাতে মারধর করেন।
হামলায় আহত সাংবাদিক আবিদ হাসান রাসেলকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে নেওয়া হয়েছে।
তবে হামলার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে ঘটনাস্থলেই ছিলেন বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম রিয়াদ হোসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি সেখানে উপস্থিতই ছিলাম না। ঘটনাটি শুনেছি। বরং দুঃখ পেয়েছি ঘটনায়। আজকে তো লাঠিসোটা নিয়ে বাম সংগঠনের নেতাকর্মীদের তৎপর দেখেছি ক্যাম্পাসে।’ হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার ফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এর আগে ২৩মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের বিক্ষোভ ও কুশপুত্তলিকা দাহ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলায় দৈনিক মানব জমিনের জীবন আহমেদ এবং দৈনিক দেশ রূপান্তরের রুবেল রাশিদ আহত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের পাশাপাশি ভিন্নমতের ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগ নেতাদের বেওপরোয়া হয়ে ওঠার কারণেই সাংবাদিক থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের কেউ তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দলীয় প্রভাব খাটিয়েই ছাত্রলীগ নেতারা এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। সরকার দলীয় বিধায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে কেউ সাহস করে না। এমনকি প্রশাসনও কোনো ভূমিকা নিতে পারে না। এসবের শাস্তি নিরূপণ নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২১৪৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ