কম্পাস জিনিসটা বেশ মজার। যে দিকেই ফেরানো যাক না কেন, এর কাটা উত্তর-দক্ষিণ হয়েই থাকবে, যদি না আশে পাশে কোন শক্তিশালী চুম্বক থাকে।
কম্পাস আসলে কি? এটা আসলে নিজেই একটা চুম্বক। দণ্ড আকৃতির এই চুম্বকটির ঠিক মাঝ বরাবর জায়গায় একটি পিভট পয়েন্ট ব্যবহার করে শূন্যে ভাসিয়ে রাখলে সেটা নিজে থেকেই উত্তর-দক্ষিণ দিকে তাক করে থাকে।
এটা কেন উত্তর-দক্ষিণ দিকে তাক করে থাকে সবসময়? এটার উত্তরটা আরও বেশি চমকপ্রদ। শুরুতেই বলেছি, আশে পাশে কোন শক্তিশালী চুম্বক থাকলে কম্পাসের কাটা সেদিকে ঘুরে যায়। তাহলে কি অন্য সময়ও এটা আরও বড় কোন চুম্বকের দিকে তাক করে থাকে?
আমাদের পৃথিবী নিজেও একটা বিশাল চুম্বক। এরও আছে উত্তর এবং দক্ষিণ। কম্পাসের কাটাও তাই উত্তর দক্ষিণ দিকে তাক করে থাকে এই বিশাল চুম্বক দ্বারা প্রভাবিত হয়ে।
বর্তমান সময়ে কম্পাস খুব সহজ-সরল একটা বিষয় মনে হতে পারে। কিন্তু এই কম্পাস আবিষ্কারের পেছনেও রয়েছে বিশাল ইতিহাস। ইউরোপিয়ানরা যখন প্রথম আমেরিকায় যাবার পরিকল্পনা শুরু করে তখনই তারা একটা দিক নির্দেশক যন্ত্রের অভাব অনুভব করে। তারা পরিষ্কার দিনের আকাশের সূর্য কিংবা রাতের আকাশের নক্ষত্র বিশেষ করে নর্থ স্টার বা সন্ধ্যা-তারার অবস্থান দেখে দিক নির্ণয় করতেন।
কিন্তু সেক্ষেত্রে আকাশ পরিষ্কার না থাকলে কিংবা ঝড় বা কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দিক নির্ণয় করা শুধু কষ্টসাধ্যই নয়, অনেকটা অসম্ভব ছিল। এই সীমাবদ্ধতাও তাদেরকে কম্পাস আবিষ্কারে আরও বেশি উৎসাহিত করে।
অবশ্য তারও আগেই প্রাচীনকালের মানুষেরা ম্যাগনেট বা চুম্বকের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছিল যে ম্যাগনেট কে ঝুলিয়ে রাখলে এর এক প্রান্ত সবসময় নর্থ স্টারের দিকে মুখ করে থাকে অর্থাৎ, নর্থ স্টারকে নির্দেশ করে। ধারনা করা হয় ১৩ শতকের দিকে ইউরোপিয়ানরাই এই ধারনার উপর ভিত্তি করেই কম্পাস বা দিক নির্দেশক যন্ত্রের আধুনিকায়ন করে। তবে এমন কথারও প্রচলন আছে যে আরবরাই প্রথম চীনাদের তত্ত্ব অনুসরণ করে কম্পাস আবিষ্কার করে। মূলত সারা বিশ্বের বিভিন্ন অবস্থান থেকে সহজে কাবা-ঘরের অবস্থান বের করার উদ্দেশ্যে তারা এটা নিয়ে কাজ করে বলে জানা যায়। দৈনিক পাঁচ-ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্য কাবা শরীফের অবস্থান জানা জরুরী ছিল মুসলমানদের জন্য।
বিভিন্ন তথ্য নির্দেশ করে যে খ্রিষ্টপূর্ব ১ম শতকে চায়নিজরা চুম্বকের এই দিক নির্দেশক গুণাবলী আবিষ্কার করে। এর আগে চুম্বকের লোহা এবং অন্যান্য ধাতব আকর্ষণ করার ক্ষমতা নিয়ে তারা জানত, কিন্তু সেটা নিয়ে তেমন কোন কাজ তারা করেনি। বিষয়টা মূলত মজা হিসেবেই দেখত তারা। এর পরে দিক নির্দেশক গুণাবলী আবিষ্কার করার পরেও তারা লম্বা সময় এটাকে গোপন রেখে ভবিষ্যৎ বলার যন্ত্র হিসেবে সবাইকে ধারনা দিয়েছে। আবিষ্কারের প্রায় কয়েক’শ বছর পরে এটাকে কার্যকরী-ভাবে দিক নির্দেশক যন্ত্র হিসেবে তারা ব্যবহার শুরু করে।
১৪ শতকের দিকে কম্পাসের ব্যবহার বেড়ে গিয়ে একটা সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়। বর্তমান বিজ্ঞান দিক নির্দেশনার জন্য হাজারো প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে, কিন্তু এ সব কিছুর শুরুটা কিন্তু হয়েছিল এই সাধারণ একটা কম্পাসের মাধ্যমেই।
আপনার মতামত জানানঃ