খুব বেশি বড় নয়। পরিযায়ী পাখিরা বিশ্রাম নেয় সেই দ্বীপে। বসতিহীন এই দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এখনও ছাপ পড়েনি আধুনিকতার। পরিযায়ী পাখি দেখতে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এই দ্বীপে ঘুরতে যান পর্যটকেরা।
আমেরিকার কানেটিকাটের মিলফোর্ড শহরের কাছে রয়েছে চার্লস দ্বীপ। বর্তমানে সিলভার স্যান্ডস স্টেট পার্কের অন্তর্গত রয়েছে দ্বীপটি। লোকমুখে শোনা যায়, ৩০০ বছরের পুরোনো অভিশাপে মোড়া রয়েছে দ্বীপটি। স্থানীয়দের কেউ কেউ দাবি করেন, এক জলদস্যুর গুপ্তধনও লুকোনো রয়েছে এই দ্বীপে।
পরিযায়ী পাখিদের আস্তানা হলেও বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে চার্লস দ্বীপে যাওয়া নিষিদ্ধ। প্রতি বছর মে থেকে শুরু করে আগস্ট পর্যন্ত চার্লস দ্বীপে প্রবেশ করতে পারেন না পর্যটকেরা। কারণ এই সময় নানা ধরনের বিপন্ন প্রজাতির পাখি সেখানে বাসা বাঁধে। বছরের অন্যান্য সময়ে মূল স্থলভাগ থেকে চার্লস দ্বীপ পর্যন্ত পায়ে হেঁটেই যেতে হয় পর্যটকদের। জোয়ার-ভাটার সময় লক্ষ করে সেই দ্বীপে যান পর্যটকেরা।
ভাটার সময় খুব সহজে চার্লস দ্বীপে পৌঁছে যাওয়া গেলেও জোয়ারের সময় এই দ্বীপের অধিকাংশই পানির তলায় ডুবে যায়। পানির স্রোত বেশি থাকায় পর্যটকদের প্রাণসংশয়ের আশঙ্কাও থাকে। চার্লস দ্বীপের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ‘অভিশাপের’ ভয়েও পর্যটকেরা সেখানে বেশি সময় কাটাতে চান না।
লোকমুখে শোনা যায়, ১৬৩৯ সালে চার্লস দ্বীপের প্রধানের সঙ্গে ইউরোপ শাসকদের বচসা হয়। প্রধানের কন্যাকে নাকি অপহরণ করে নিয়ে যান ইউরোপের কয়েক জন বাসিন্দা। তাদের হাত থেকে কন্যাকে উদ্ধার করার জন্য চার্লস দ্বীপটি ইউরোপের শাসকদের হস্তান্তর করেন প্রধান।
চুক্তি অনুযায়ী চার্লস দ্বীপটি ইউরোপের অধীনে চলে গেলেও শোনা যায় প্রধান সেই সময় নাকি দ্বীপের অমঙ্গল প্রার্থনা করে অভিশাপ দিয়েছিলেন। তার পর থেকে সেই দ্বীপ এড়িয়েই চলতেন সাধারণ বাসিন্দারা। কানাঘুষো শোনা যায়, চার্লস দ্বীপ অভিশপ্ত শোনার পর এই দ্বীপে নিজের সম্পদ লুকোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্কটল্যান্ডের জলদস্যু ক্যাপ্টেন কিড। ১৬৯৯ সালে চার্লস দ্বীপে নিজের সমস্ত সম্পদ লুকিয়ে ফেলেন তিনি। কিন্তু পরে ধরা পড়ে যান তিনি।
লোকমুখে শোনা যায়, ধরা পড়ার পর চার্লস দ্বীপকে অভিশাপ দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন কিডও। এই দ্বীপে মাধে হগ রক নামে একটি জায়গা রয়েছে। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, সেখানেই গুপ্তধন লুকিয়ে রেখেছিলেন জলদস্যু। কিন্তু বহু বছর ধরে গুপ্তধন খোঁজার চেষ্টা করলেও তার সন্ধান মেলেনি।
একটি বা দুটি নয়, তিনটি অভিশাপের ‘ফাঁড়া’ রয়েছে চার্লস দ্বীপে। ষোড়শ শতকে অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের সম্রাট মোন্টেজুমাকে হারিয়ে তার সমস্ত ধনসম্পত্তি লুট করে সমুদ্রপথে ফিরছিলেন মেক্সিকোর সম্রাট গুয়াতমোজিন।
লোকমুখে শোনা যায়, গুপ্তধনের লোভে গুয়াতমোজিনের উপর আক্রমণ করেছিলেন সেখানকার স্থানীয়রা। তাই গুপ্তধন রক্ষা করতে চার্লস দ্বীপেই সেগুলি পুঁতে দেওয়া হয়। পরে গুপ্তধনের হদিস পেতে চার্লস দ্বীপে গেলেও কোনও রকম গুপ্তধনের সন্ধান পাননি কেউ। অধিকাংশের দাবি, ওই দ্বীপের মধ্যেই রয়েছে বহু সম্পদ। কিন্তু তিনটি অভিশাপের ‘ফাঁড়া’ থাকার কারণে কেউ গুপ্তধনের খোঁজ পান না।
বর্তমানে পরিযায়ী পাখির আস্তানা হওয়ায় চার্লস দ্বীপে খননকার্য চালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া রয়েছে। তবে স্থানীয়দের দৃঢ় বিশ্বাস, দ্বীপটি অভিশাপগ্রস্ত হওয়ায় গুপ্তধনের ইতিহাসও দ্বীপের ভিতর চাপা থেকে যাবে।
আপনার মতামত জানানঃ