দেশে বৈদেশিক ঋণ গত এক বছরে বেড়েছে ৩৪৯ কোটি ডলার। টাকার অঙ্কে যা ৩৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। গত বছরের (২০২২) জুনে মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ৯ হাজার ৫৪৫ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮৯৪ কোটি ডলার।
এই সময়ে ব্যাপকভাবে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরও পরিমাণ বেড়ে চলেছে। আলোচ্য সময়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেড়েছে, কমেছে স্বল্পমেয়াদি ঋণ।
রবিবার (৩ ডিসেম্বর) প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বৈদেশিক ঋণ ও বিনিয়োগে গত জুন পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালের জুনের তুলনায় চলতি বছরের জুনে দেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বেড়েছে। দেশে আসা সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বা এফডিআই কমেছে। আর বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের স্থিতিও সামান্য কমেছে।
২০২২ সালের জুনে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ছিল ৭ হাজার ৪৮০ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২৯০ কোটি ডলার। গত বছরের জুনে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ছিল ২ হাজার ৬৫ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুনে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬০৩ কোটি ডলার। সাম্প্রতিক সময়ে এ ঋণ আরও কমেছে।
সূত্র জানায়, গত দেড় বছর ধরে দেশে প্রকট ডলার সংকট চলছে। স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের কারণে এ সংকট আরও বেড়েছে। কিন্তু সার্বিকভাবে স্বল্পমেয়াদি ঋণ কমলেও এখন বেড়ে গেছে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ। ফলে সার্বিকভাবে মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বেড়ে গেছে, যা পরিশোধে ডলারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, বাজারে ডলারের প্রবাহ বেড়েছে। আগে যেসব ঘাটতি ছিল তা এখন কমে এসেছে। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধে ডলারের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে না।
প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বৈদেশিক ঋণ বাড়লেও প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। ২০২১ সালের জুনে মোট ঋণ বেড়েছিল ১৯ শতাংশের বেশি। গত বছরের জুনে তা কমে ঋণ বৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ১৭ শতাংশে। চলতি বছরের জুনে তা আরও কমে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ।
গত বছরের জুনে তুলনায় চলতি বছরের জুনে স্বল্পমেয়াদি ঋণ কমেছে ২২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কমেছে প্রায় ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত বছরের (২০২২) জুনে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়েছিল ৪৭ শতাংশ এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেড়েছিল ১১ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্যে আরও দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে এফডিআই এসেছিল ৩৪৪ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে এসেছে ৩২৫ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে এফডিআই কমেছে ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। মোট এফডিআইয়ের মধ্যে মাত্র ৮০ কোটি ডলার এসেছে বিদেশ থেকে পুঁজি হিসাবে। বাকি অর্থ দেশে কার্যরত বিদেশি কোম্পানিগুলোর মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ ও এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ।
দেশে ক্রিয়াশীল বিদেশি কোম্পানিগুলোর অর্জিত মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ হিসাবে এফডিআই এসেছে ২৩৭ কোটি ডলার। মাত্র ৮ কোটি ডলার এসেছে এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ হিসাবে।
গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি নিট পুঁজি এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৬ কোটি ডলার। সব মিলে এসেছে ২৯ কোটি ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ এসেছিল ৬২ কোটি ডলার। আলোচ্য এক বছরের ব্যবধানে দেশটি থেকে বিনিয়োগ কমেছে।
বিদেশে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের স্থিতি গত বছরের জুনে ছিল ৪০ কোটি ডলার, চলতি বছরের জুনে তা সামান্য কমে ৩৮ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের স্থিতি কমেছে ২ কোটি ডলার।
আপনার মতামত জানানঃ