বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সংগঠন- হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অভিযোগ যে ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘুদের জন্য যেসব অঙ্গীকার করেছিলো তার কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। বরং তারা মনে করেন, দেশের সংখ্যালঘুরা এখন ‘নিরাপত্তাহীন পরিবেশে’র মধ্যে আছে।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “একটি অঙ্গীকারও বাস্তবায়ন করা হয়নি। সরকারি দল বারবার আমাদের উপেক্ষা করার চেষ্টা করেছে। একটানা অবজ্ঞা অবহেলার মধ্যেই আছে এ দেশের ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এদের গুরুত্ব শুধু ভোটের সময়। এর আগেও না, পরেও না। ”
তিনি বলছেন, এখন ১৫ই নভেম্বর পর্যন্ত তারা দেখবেন যে সরকার আসলে কোন উদ্যোগ নেয় কিনা, না হলে আগামী ১৭ই নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করে তারা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করবেন।
যদিও সরকারের পক্ষে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কবির বিন আনোয়ার বলছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আওয়ামী লীগের দেয়া কয়েকটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পর্যায়ে আছে, যা নিয়ে কাজ চলছে।
“সরকার একেবারে কিছু করেনি তা নয়। একটি সুরক্ষা কমিশন তৈরির বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয় হয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আছে। আরও কিছু বিষয়ে কাজ হচ্ছ।”
কবির বিন আনোয়ার, যিনি গত সেপ্টেম্বরে ঐক্য পরিষদের অনশন কর্মসূচিতে গিয়ে সংখ্যালঘুদের দাবিগুলোর বিষয়ে সরকারের হয়ে কথা বলেছিলেন।
বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসাবে দেখে এবং বাংলাদেশে যাতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, ধর্মীয় উগ্রবাদ ঘাঁটি গাড়তে না পারে তার জন্য তৎপর বলে দাবি করে।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে পরবর্তী গত নয় বছরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সাড়ে তিন হাজারের বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এখন আবার আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি হওয়ার নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে। কারণ বাংলাদেশে অতীতে কয়েকটি নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক সহিংসতার উদাহরণ আছে।
ইতোমধ্যেই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করতে নির্বাচন কমিশনকে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলছেন, গণতন্ত্র ও সমতা না থাকার কারণেই ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠী – যারা সংখ্যায় কম তারা নানা সময়ে আক্রান্ত হচ্ছে এবং বিচার পাচ্ছেনা।
“এখন আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট নিরসন না হলে এসব গোষ্ঠীর মানুষেরা আরও সংকটে পড়ার আশংকা থাকবে। গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিত হলে সবার সমান অধিকারও নিশ্চিত হতে পারে।”
ইশতেহারে কী অঙ্গীকার ছিলো আওয়ামী লীগের
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশীর ভাগ মানুষ আওয়ামী লীগকেই ভোট দেয় এমন কথা প্রচলিত আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
রানা দাশগুপ্তের অভিযোগ, “এখন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই সংখ্যালঘুরা চূড়ান্ত নিরাপত্তাহীন পরিবেশে আছে এবং এ কারণে তাদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে।”
এ কারণেই তারা মনে করেন সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়া দরকার। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো।
একই সাথে বলা হয়েছিলো ‘সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল প্রকার আইন ও অন্যান্য অন্যায় ব্যবস্থার অবসান করা হবে’।
ইশতেহারের এ সম্পর্কিত অংশে লক্ষ্য ও পরিকল্পনা হিসেবে শুরুতেই দলটি বলেছিলো যে অর্পিত সম্পত্তি সংশোধনী আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকৃত সত্ত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।
একই সাথে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের অধিকারের স্বীকৃতি এবং তাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবনধারার স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ ও তাদের সুষম উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
তবে রানা দাশগুপ্ত বলছেন এসবের কোনটিরই বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগই তাদের চোখে পড়েনি। যদিও কবির বিন আনোয়ার বলছেন সুরক্ষা সম্পর্কিত বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয় হয়ে এখন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আছে এবং এটি ছাড়াও আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ কাজ করছে।
আপনার মতামত জানানঃ