পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের নাম সবাই জানে। কিন্তু, খুব কম লোকই জানেন যে এই তুষার আচ্ছাদিত চূড়াগুলিতে রাতে শোনা যায় এক বিকট শব্দ। এই আওয়াজগুলো এতই জোরে এবং ভীতিকর হয় যে যে শত শত কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যায়।
হাই-অলটিটিউড গ্লেসিয়ার থেকে রাতের দিকে একটা ভয়ংকর শব্দ শোনা যায়। এ অভিজ্ঞতা অনেকেরই। এই অভিজ্ঞতা খুব স্পষ্ট করে হয়েছে এভারেস্ট অঞ্চলেও। হয়েছে বহুজনের। সাধারণ পর্যটক থেকে নামী এক্সপিডিশন লিডারের, শেরপা থেকে গ্লেসিওলজিস্টদের। বিজ্ঞানী রহস্যের পিছনে যুক্তি খোঁজেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ তো রহস্যই ভালোবাসেন। তাঁরা বিশ্বাস ও ভয় মিশিয়ে কখনও কোনও দেবতার কথা পর্যন্ত কল্পনা করেন, কেউ কেউ কয়েক ধাপ নেমে ভাবেন এ হয়তো তুষারমানবের চিৎকার।
ডেভ হ্যানই সর্বপ্রথম এ সম্পর্কে জানান। তিনি ১৫ বার এভারেস্টের চূড়া জয় করেছেন। তবে এবার প্রথমবারের মতো এর কারণ খুঁজে বের করার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। যা জানলে আপনিও অবাক হবেন।
২০১৮ সালে, হিমবিজ্ঞানী ইভজেনি পোডলস্কির নেতৃত্বে বিজ্ঞানীদের একটি দল হিমবাহের ভূমিকম্পের ক্রিয়াকলাপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। তারা তিন সপ্তাহ এই হিমালয় অঞ্চলে ছিলেন। সেখানকার পরিবর্তনগুলি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিল।
শুধু তাই নয়, রাতে কণ্ঠস্বর শোনার বিষয়টিও রেকর্ড করেন। এরপর ফিল্টার ব্যবহার করে প্রতিটি ভয়েস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। তবে তিনি বুঝতে পারেন এই আওয়াজ কোনও ভৌতিক নয়, হিমবাহ ভাঙার শব্দ
গবেষকরা ২০১৮ সালে নেপালের হিমালয়ে এক সপ্তাহের বেশি ট্রেকিং করে সেখানে ট্র্যাকার্ডিং-ট্রামবাউ হিমবাহ সিস্টেমের সিসমিক কার্যকলাপ পরীক্ষা করেছিলেন। তারা মাউন্ট এভারেস্টে তিন সপ্তাহ কাটিয়েছেন।
হিমবাহের গভীরে কম্পন পরিমাপ করার জন্য বরফের উপর সেন্সর স্থাপন করেছিলেন বিজ্ঞানীরা, একই প্রযুক্তি ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়।
দলটি সিসমোগ্রাফিক ডেটা পরীক্ষা করে নিশ্চিত করে যে রাতের শব্দগুলির কারণ ছিলো চরম ঠান্ডা। তারা দেখেছে যে অন্ধকারের পরে তাপমাত্রার তীব্র পতনের কারণে হিমবাহের বরফ ফাটতে পারে। অভিযাত্রী ডেভ হ্যান ১৫ টি এভারেস্ট শৃঙ্গে অভিযান সমাপ্ত করেছেন। তিনি পার্বত্য উপত্যকার চারপাশে বিভিন্ন স্থানে বরফ ও শিলা ভেঙে পড়ার কথা শুনেছেন।
হিমবিজ্ঞানী পোডলস্কি ডেইলি মেইলকে জানিয়েছেন, “এটি এমন একটি অঞ্চল যেখানে মানুষ আশ্চর্যজনক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়। রাতে তাপমাত্রা প্রায় -১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যেতে পারে। তাপমাত্রার এই হারে পতনের কারণে এখানকার বরফগুলি খুব সংবেদনশীল হয়।”
এসডব্লিউ/এসএস/১৪১০
আপনার মতামত জানানঃ