প্রায় ২৩০০ বছর আগের প্যাপিরাসের একটি ছোট টুকরো পাওয়া গেছে মিশরে। যাকে এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে পুরানো বইয়ের অংশ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রোটো-পেপার প্যাপিরাসটি ১৯০২ সালে এল-হিবা নেক্রোপলিসে খনন করা হয়েছিল এবং বর্তমানে এটি অস্ট্রিয়ার গ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে।
টাইমস জানিয়েছে, ১৫ সেমি বাই ২৫ সেমি পরিমাপের খণ্ডটি প্রায় ২৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের। বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছেন যে এটি “কোডেক্স” নামে পরিচিত একটি বিন্যাসে একত্রে সেলাই করা হয়েছিল এবং এক পর্যায়ে এটি কার্টোনেজে পরিণত হয়েছিল। এটি এমন একটি উপাদান যা মমি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে কোডেক্সগুলি খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের প্রথম দিকে আবির্ভূত হয়েছিল। এতদিন পর্যন্ত বৃটিশ লাইব্রেরি ও ডাবলিনের চেস্টার বিটি মিউজিয়ামে রাখা ১৫০-২৫০ খ্রিস্টাব্দের উদাহরণগুলিকে প্রাচীনতম বইয়ের নমুনা বলে মনে করা হয়েছিল।
এল-হিবা প্যাপিরাসের টুকরোতে লেখাগুলি বিয়ার এবং তেলের করের হিসাব বলে মনে করা হচ্ছে, যা প্রাচীন গ্রিক ভাষায় লেখা। প্রাচীন লিখিত সামগ্রীর একজন সংরক্ষক থেরেসা জাম্মিত লুপি বলেছেন, ‘এরকম একটি আবিষ্কার সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। প্রথমে আমি একটি সুতোর টুকরো দেখেছিলাম, তারপর আমি বুঝতে পেরেছিলাম এটি একটি বইয়ের বিন্যাস।
প্যাপিরাসে স্পষ্টভাবে লেখা পাঠ্য ছিলো। গ্রাজ ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরির বিশেষ সংগ্রহের সহ-পরিচালক এরিখ রেনহার্ট বলেছেন, এল-হিবা প্যাপিরাস বইয়ের প্রাচীন নমুনা হতে পারে, বিষয়টি এখন পর্যবেক্ষণের অধীন।
তিনি মনে করেন, অন্যান্য সংগ্রহে এইরকম অন্যান্য কোডেক্স টুকরা আছে; তবে এখনও পর্যন্ত তাদের জন্য কোন পদ্ধতিগত অনুসন্ধান করা হয়নি। প্যাপিরাস সেশ্ময়ে একটি মোটামুটি সস্তা লেখার উপাদান ছিল, তাই এই টুকরাগুলির একটি বড় পরিমাণ সংরক্ষণ করা হয়েছে।
এবার চলুন বর্তমান সময় পর্যন্ত অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা প্রাচীন কিছু বইয়ের কথা জানা যাক। এর একটি ইট্রাসকান গোল্ড বুক। ইতালির প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর একটি ইট্রাসকান সভ্যতা। আদি ইতিহাস থেকেই যার নাম প্রায় বিস্মৃত। খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে গোড়াপত্তন হওয়া ইট্রাসকান সভ্যতা নিজস্ব ভাষা, লেখনী, শিল্প-সাহিত্য ও ঐশ্বর্যের কারণে বিখ্যাত ছিল।
রোমানদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয়ের মাধ্যমে বিলুপ্তি ঘটে এই সভ্যতার। ইট্রাসকান সভ্যতার একটি বই আজ থেকে প্রায় ৭৫ বছর আগে বুলগেরিয়ার স্ট্রুমা নদী খননের সময় আবিস্কৃত হয়। এই বইয়ের বৈশিষ্ট্য হলো, ২৪ ক্যারেট সোনার ছয়টি পাতে বইটি তৈরি করা হয়েছে।
ইট্রাসকান ভাষায় লেখা বইটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম বইগুলোর একটি বলে মনে করা হয়। অংকের হিসাবে বইটির বয়স দুই হাজার ছয়শ’ ৮০ বছর! প্রায় তিন হাজার বছর আগের এ বইটি বুলগেরিয়ার ন্যাশনাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে রাখা আছে।
আরও একটি হল পিগ্রি গোল্ড ট্যাবলেট। ইট্রাসকান সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত ইতালির প্রাচীন সমুদ্রবন্দর পিগ্রি। ১৯৬৪ সালে এখানে খনন কার্যের মাধ্যমে তিনটি সোনার লিখিত ফলক উদ্ধার করা হয়। যার মধ্যে দুটি ইট্রাসকান ভাষায়, অন্যটি ফিনিশীয় ভাষায় রচিত। চারপাশে ছিদ্রযুক্ত এই সোনার পাতগুলোর আনুমানিক বয়স ২৫শ’ বছর। ফিনিশীয় দেবতা এসটার্টির উদ্দেশে রাজা থিফোরি ভিলিয়ানাসের প্রশংসা ও কীর্তন লেখা রয়েছে এই সোনার পাতগুলোতে। বর্তমানে টিকে থাকা প্রাচীনতম বইগুলোর অংশ হিসেবে পিগ্রি গোল্ড ট্যাবলেটকে গণ্য করা হয়।
এই তালিকায় তৃতীয় বইটি হল সেন্ট কাথবের্ট গসপেল। প্রায় ১৩২০ বছরের পুরনো বই সেন্ট কাথবের্ট গসপেল। ৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটেনের অন্তর্ভুক্ত স্কটল্যান্ডের নর্দামব্রিয়ান চার্চের ধর্মগুরু ও যাজক সেন্ট কাথবের্টের মৃত্যুর পর তার সমাধিতে কফিনের সঙ্গে পকেট বুক সাইজের গসপেল বুক [ক্রিশ্চিয়ান ধর্মবাণী সংবলিত বই] দেওয়া হয়।
সেন্ট কাথবের্টের সমাধির সঙ্গে বইটি পাওয়া যায় বলে তার নামের সঙ্গে বইটির নামকরণ করা হয়েছে। চামড়ার বাঁধাইয়ে লাতিন ভাষায় হাতে লেখা সেন্ট কাথবের্ট গসপেলকে একমাত্র অ্যাংলো সাক্সসন টেক্সট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভাইকিংদের হাত থেকে তার সমাধিক্ষেত্র রক্ষা করার জন্য বেশ কয়েক বার জায়গা পরিবর্তন করা হয়।
অবশেষে ডুরহাম ক্যাথেড্রালে স্থায়ীভাবে তাকে সমাহিত করার আগে ১১০৪ খ্রিষ্টাব্দে লাল মোড়কের এই গসপেলটি তার কফিনের মধ্যে পাওয় যায়। নানান হাত ঘুরে অবশেষে ২০১২ সালে ব্রিটিশ লাইব্রেরি সেন্ট কাথবের্ট গসপেল ৯ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে কিনে নেয়। বর্তমানে ব্রিটিশ লাইব্রেরিতেই রয়েছে বইটি।
আপনার মতামত জানানঃ