ধর্ষণের সংজ্ঞাই বদলে দিলো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের সমাজ কল্যাণ ও শিশু সুরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, ভারতে এতদিন বলপূর্বক যৌন মিলনকেই ধর্ষণ বলে অভিহিত করা হতো। এখন থেকে বিনা সম্মতিতে যৌন মিলনও ধর্ষণ বলে গণ্য হবে।
কোনো নারীর অসহায়তার সুযোগ নিয়ে কেউ যদি তার সঙ্গে মিলনে লিপ্ত হয় তাহলে তা ধর্ষণ বলে গণ্য হবে। ভারতে যৌন মিলনে মেয়েদের সম্মতির বয়স এতদিন পর্যন্ত ১৩ ছিল। তা বাড়িয়ে ১৬ করা হয়েছে।
অর্থাৎ ভারতে ১৬-এর কম বয়সী মেয়েদের সঙ্গে যৌনমিলন ধর্ষণ বলে ধরা হবে। কোনো নারী যদি অবস্থার ফেরে কোনো পুরুষের সঙ্গে যৌন মিলন করতে বাধ্য হন তাহলেও তা ধর্ষণ বলে গ্রাহ্য হবে। অর্থাৎ, ভারতে শুধু বলাৎকারই ধর্ষণ নয়, এখন থেকে আসম্মতিতে যৌন মিলনও ধর্ষণ।
উল্লেখ্য, ভারতে ধর্ষণের গ্রাফ সবসময়ই উপরের দিকে। দিল্লিতে বিবিসির সৌতিক বিশ্বাস বলছেন, ভারতে দুর্বলদের ওপর সবলদের কর্তৃত্ব ফলাতে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। শ্রেণী-বৈষম্য এবং পুরুষ-শাসিত যে সমাজে হিংসা ছড়িয়ে ভোট পাওয়ার চেষ্টা আশঙ্কাজনক-ভাবে বাড়ছে, সেখানে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণের ঘটনাকে স্বাভাবিক পরিণতি হিসাবে দেখছেন অনেকেই।
মূলত মেয়ে ভ্রূণ হত্যার কারণে ভারতে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা কম। প্রতি ১০০ মেয়ে শিশুর জন্মের তুলনায় ১১২ টি ছেলে শিশু জন্ম নেয়। এ কারণে, স্বাভাবিকের চেয়ে নারীর সংখ্যা ভারতে প্রায় ছয় কোটি ৩০ লাখ কম।
অনেকেই বিশ্বাস করেন, পুরুষের সংখ্যা অস্বাভাবিক বেশি হওয়ার কারণে নারীর ওপর যৌন নির্যাতন বাড়ছে। নারী ও পুরুষের সংখ্যার অনুপাতে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের চিত্র সবচেয়ে খারাপ। এবং এ রাজ্যে গণ ধর্ষণের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি।
ভারত শাসিত কাশ্মীরে একটি মুসলিম যাযাবর সম্প্রদায়ের আট বছরের একটি মেয়ে শিশুকে মন্দিরে আটকে রেখে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনা পুরো ভারতকে স্তম্ভিত করে দেয়। বলা হয়, মুসলিম ঐ যাযাবররা যেন তাদের এলাকায় ছাগল চরাতে না আসে, সেটা নিশ্চিত করতে ঐ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
অনেক মানুষ এই ঘটনা প্রকাশ্যে সমর্থনও করেছে। অভিযুক্তদের সমর্থনে একটি সমাবেশে যোগ দিয়েছেন রাজ্য সরকাররে বিজেপি’র দুই মন্ত্রী । সমালোচনার মুখে তারা অবশ্য পরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হযন।
কেরালা রাজ্যে একজন ব্যাংক ম্যানেজার ফেসবুকে কাশ্মীরে ঐ ধর্ষণ ও হত্যার সমর্থনে পোস্টিং দেন – “এটা না হলে ঐ মেয়েটি বড় হয়ে হয়তো ভারতের বিরুদ্ধে মানব-বোমা হয়ে হাজির হতো।” তাকে অবশ্য বরখাস্ত করা হয়। চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করেন, “আমাদের কন্যারা বিচার পাবে।” অনেকেই বলছেন তার এই আশ্বাস ফাঁকা বুলি।
অন্য দলের রাজনীতিকরাও ব্যতিক্রমী তেমন কিছু দেখাতে পারছেন না। ২০১৪ সালে একজন নারী সাংবাদিককে ধর্ষণ করার দায়ে তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, উত্তর প্রদেশের বড় দল সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়াম সিং যাদবের মন্তব্য ছিল- “পুরুষরা ভুল করে। সেজন্য তাদের ফাঁসি দেওয়া যায়না। আমরা ধর্ষণ বিরোধী আইন বদলাবো।”
ভারতের সামাজিক এই বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে চলতে হয় নারীদের: নিজেকে রক্ষা করতে চাইলে, ঠিকমতো পোশাক পরো, পুরুষ সঙ্গী ছাড়া বাইরে যেওনা, অথবা ঘরের ভেতরে থাকো।
সবচেয়ে আশঙ্কা যেটা তা হলো এখন অধিক সংখ্যায় শিশুরা টার্গেট হচ্ছে। সরকারি পরিসংখ্যানেই দেখা গেছে, ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে শিশু ধর্ষণের ঘটনা দ্বিগুণ হয়েছে। দেশে ধর্ষণের শিকার নারীদের ৪০ শতাংশই শিশু।
এসডব্লিউ/এসএস/২২৫৭
আপনার মতামত জানানঃ