মিশরের মমির বিষয়ে আমরা সবাই জানি। প্রাচীনকালে লোকেরা শবদেহকে একটা বিশেষ রাসায়নিকে মাখিয়ে বাক্সতে ভরে সুরক্ষিত রাখার একটা প্রক্রিয়া পালন করতেন। যাকে আমরা বলি মমি। প্রায় এক শতাব্দী পরেও চামড়া বা অন্যান্য শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পচন না ধরে তার জন্য ওষুধ ব্যবহার করা হতো।
আজ আমরা কথা বলব, এই মমির সঙ্গে জড়িত আজব কিছু তথ্যের। ইউরোপীয় লোকেরা মিশরের মমি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং তারা এটি খাওয়া শুরু করে দিয়েছিলেন।
লাইফ সাইন্স এর বক্তব্য অনুযায়ী লোকেরা বিশ্বাস করতেন মাটি থেকে বের হওয়া এবং টিঞ্চারে মোড়া মানবদেহের অবশিষ্ট অংশ থেকে, প্লেগ থেকে নিয়ে মাথাব্যথা পর্যন্ত যে কোনও রোগ ঠিক করে দিতে পারে। মধ্যযুগে ১৯ শতাব্দী পর্যন্ত প্রাচীন মিশরের লোকেদের কাছে বেঁধে রাখা এই মমির দেহ আকর্ষনের বিষয়বস্তু ছিল।
মমির দেহের মাংস থেকে মানুষের চিকিৎসা হতে পারে। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে লোকেরা মমি খাওয়া শুরু করে দিয়েছিল। মমি থেকে মামিয়া নামের একটা প্রোডাক্ট তৈরি করা হয়। যেগুলি ওষুধ বিক্রেতারা তৈরি করে বিক্রি করতেন। গরীব হোক বা ধনপতি, সবাই কয়েকশো বছর ধরে এই ওষুধ খেয়েছেন। কবর থেকে ইউরোপে নিয়ে আসা মমির অবশিষ্ট থেকে বানানো হতো এই ওষুধ।
১২ শো শতকে ওষুধ বিক্রেতারা পৃথিবীর ঔষধি গুণের জন্য মমি ব্যবহার করতেন। পরবর্তী ৫০০ বছর পর্যন্ত মমিকেই ওষুধ বলে মনে করা হচ্ছিল। এটি ওই সময়ের কথা যখন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ তৈরি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে মাথাব্যথা, পেট ব্যথা বা অন্যান্য রোগের জন্য, যেগুলো মহামারীতে পরিণত হতো, যেমন ম্যালেরিয়া, প্লেগের মতো রোগের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকেরা মমির খুলি-হাড় এবং মাংসের উপরই ভরসা করতেন।
১৫৬৪ সালে আলেকজান্দ্রিয়াতে মৃত লোকের নকল মমি দেখা গিয়েছিল। তখন এক ব্যক্তি লোকেদের এটি ঠকানো হচ্ছে বলে জানান। কারণ এমন হবে না যে, লোকেরা সবসময়ই আসল প্রাচীন মমি পাবেন। এই ঘটনা থেকে একটা বিষয় সামনে আসে, যে চিকিৎসা পদ্ধতিতে সব সময় মৃত শরীরে প্রয়োজন হবে এবং মিশরের মমি এই প্রয়োজন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যায় নেই।
এরপরে ঔষধ বিক্রেতারা অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত মমি থেকে ওষুধ তৈরি করে বিক্রি করতে শুরু করেন। যদিও কিছু চিকিৎসকেরা এটি মানতে নারাজ শুকনো মমির দেহ থেকে ওষুধ তৈরি হতে পারে। কিছু ডাক্তারকে মনে করতেন যে তাজা মাংস এবং রক্ততেই জীবনীশক্তি থাকে। এই ওষুধ থেকে ওই সময়ের বড় বড় লোকেরা প্রভাবিত হয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের রাজা চার্লস দ্বিতীয়-র হার্ট অ্যাটাক হলে তিনি মানুষের মাথার খুলি দিয়ে তৈরি ওষুধ খেয়েছিলেন। ১৯ শতক পর্যন্ত ডাক্তাররা নিউরো থেকে যে কোনও রোগের চিকিৎসা করতেন মানুষের মাথার খুলি ব্যবহার করে।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে রোগ ঠিক করার জন্য মমি থেকে তৈরি হওয়া ওষুধ মানুষ খেতেন। কিন্তু ভিক্টোরিয়ানরা আনরাপিং পার্টি করেছিলেন এই মমি দিয়ে। ব্যক্তিগত পার্টিতেই মিশরের মমি মনোরঞ্জনের জন্য খোলা হত।
১৮৩৪ সালে সার্জেন্ট থমাস প্যাটেগ্রো রয়াল কলেজ অফ সার্জেন্টসে একটি মমি খুলেছিলেন। ওই সময়ে অটোপসি এবং অপারেশন সার্বজনিক ভাবে হতো। পার্টিতে মমির মোড়ক খোলা রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে। পার্টিতে মমি খোলা জারি থাকে বিংশ শতকের শুরুর হওয়ার পরই মমি খোলা পার্টি বন্ধ হয়ে যায়।
এরপরই তুতেনখামেনের মমির খোঁজ পাওয়া যায়। যেটির পর একটি অন্য বিষয় সামনে নিয়ে আসে। ১৯২৩ সালে তুতেনখামেনের খোঁজ প্রযোজক লর্ড কার্নার্বন আচমকা মারা যান এবং অন্ধ বিশ্বাস জন্মে যায়, মমির অভিশাপের তার মৃত্যু হয়েছে।
আধুনিক সময়ের প্রাচীন কলাকৃতি যেমন মমির মতো ঐতিহাসিক জিনিসের কালোবাজারি প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের। আজকে কেউ, কোনও পুরাতত্ত্ববিদ কোন মমি খুলতে পারবেন না এবং কোন চিকিৎসক সেটি খাবার বুদ্ধি দিতে পারবে না। কিন্তু মমির লোভ এখনও পর্যন্ত ওই রকমই রয়েছে।
এসডব্লিউ এসএস /১২০০
আপনার মতামত জানানঃ