ভারতের এক প্রাচীন দুর্গ ‘রাইসেন দুর্গ’। যদিও বিশ্বজুড়ে ছোট-বড় অনেক ধরনের দুর্গ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশি দুর্গের খোঁজ মেলে ভারতে। প্রতিবেশী এই দেশে রাজাদের অনেক দুর্গ আছে। প্রতিটি রাজ্য দুর্গের নিজস্ব গুরুত্ব ও ইতিহাস আছে।
অনেক দুর্গ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থানও পেয়েছে। প্রাচীনকালে শত্রুদের বাহিনী এড়াতে পাহাড়ি অঞ্চলে এমনকি নানা আশ্চর্যজনক আকৃতি ও বিশেষত্ব নিয়ে নির্মিত হয়েছিল এসব দুর্গ। এমনই একটি দুর্গ রাইসেন। যা অবস্থিত ভারতের মধ্যপ্রদেশের রাইসেন জেলায়।
রাইসেন ফোর্ট মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপাল থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি বিশাল ঐতিহাসিক ভবন। এই দুর্গ গন্ডোয়ানার উত্তর-পশ্চিম কোণে বিন্ধ্যাচল রেঞ্জের একটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এটি ঐতিহাসিক গুরুত্বের পাশাপাশি সুন্দর দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত।
৮০০ বছরের পুরোনো এই দুর্গে নয়টি প্রবেশদ্বার, দুর্গ, গম্বুজ ও মধ্যযুগের প্রথম দিকের বেশ কয়েকটি ভবনের অবশিষ্টাংশ আছে।
যা বর্তমানে বেশিরভাগই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কথিত আছে, এখানকার রাজা তার নিজের রানির শিরশ্ছেদ করেছিলেন। এর পেছনেও আছে দীর্ঘ কাহিনি।
এসব কারণেই দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা এই ঐতিহাসিক দুর্গ দেখতে আসেন। দুর্গের অভ্যন্তরে একজন মুসলিম সাধক হযরত পীর ফতেহুল্লাহ শাহের দরগাহ রয়েছে। এই মন্দির নাকি তীর্থযাত্রীদের মনের ইচ্ছা পূরণ করে।
জানা যায়, দুর্গটি ১২০০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়। এই দুর্গের ভেতরে থাকা একটি মন্দির ও একটি মসজিদ দুটি ধর্মের সমতা প্রদর্শন করে। অনেক রাজা নাকি রাজত্ব গড়েছেন এই দুর্গে।
শের শাহ সুরি ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। কথিত আছে, এই দুর্গ জয়ের জন্য শের শাহ সুরি সব কিছু বাজি রেখেছিলেন। দুর্গ শাসনের জন্য কামান তৈরি করতে তিনি তামার মুদ্রা গলিয়েছিলেন। কঠোর পরিশ্রমের কারণে তিনি দুর্গ জয় করতে সক্ষম হন।
তবে জানা যায়, ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে শের শাহ সুরি এই দুর্গ জয়ের জন্য প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখন এই দুর্গের শাসন ছিল রাজা পুরনমল। যখন তিনি জানতে পারলেন তার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে ও তিনি পরাজিত হতে চলেছেন, তখন নিজের স্ত্রী/রানিকে শত্রুদের হাত থেকে বাঁচাতে গলা কেটে হত্যা করেন।
দুর্গ সম্পর্কিত অলৌকিক ঘটনা: এই দুর্গ সম্পর্কে আরো একটি বিস্ময়কর তথ্য আছে। প্রচলিত আছে, রাজা রাজসেনের একটি দার্শনিক পাথর আছে, যেটি লোহাকেও সোনায় রূপান্তর করতে পারে। এটি একটি রহস্যময় পাথর, যার জন্য অনেক যুদ্ধ হয়েছিল।
রাজা রাজসেন পরাজিত হলে তা হ্রদে ফেলে দেন। যদিও অন্যান্য রাজারা এই পাথর খুঁজে বের করার অনেক চেষ্টা করেছিলেন, তবে পাথরটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের ধারণা, আজও মানুষ এই পাথর খুঁজতে ভিড় করেন দুর্গে।
তবে কথিত আছে, একটি জ্বিন নাকি মূল্যবান ও রহস্যময় পাথরটি পাহারায় রেখেছেন। যদিও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ পায়নি।
এসডব্লিউএসএস/২০৫৫
আপনার মতামত জানানঃ