রাশিয়ার তেল-গ্যাসের ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর বড় ধরনের নির্ভরশীলতা রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে রাশিয়ার তেল-গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে পশ্চিমারা। তবে রাশিয়ার তেল-গ্যাস ছাড়া পশ্চিমারা যে চলতে পারবে না তা পূর্বেই অনুমান করা গিয়েছিল।
গোটা বিশ্ব জুড়েই এই ধারণা প্রায় স্থায়ী রূপ পেয়েছিল যে নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে রাশিয়া থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি তলানিতে ঠেকবে। কিন্তু গত বছর সমুদ্রপথে দেশটি থেকে আমদানি মাত্র ১২ শতাংশ কমেছে। এমনকি সমুদ্রপথে ব্লকটিতে জ্বালানি তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে এখনো শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে রাশিয়া। খবর অয়েলপ্রাইস ডটকম।
মেরিটাইম খাতের ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান বেনসেরো কস্তার দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে ইইউ রাশিয়া থেকে সমুদ্রপথে ৯ কোটি ৮৮ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছে, যা ২০২১ সালে ছিল ১১ কোটি ২৫ লাখ টন এবং ২০১৯ সালে ১২ কোটি ৮৫ লাখ টন।
গত বছর ইইউর সমুদ্রপথে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির ২১ দশমিক ৯ শতাংশই রাশিয়া থেকে এসেছে। উত্তর সাগরীয় অঞ্চল থেকে এসেছে ১৭ শতাংশ এবং উত্তর আফ্রিকা থেকে ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
এক বছরের ব্যবধানে উত্তর সাগর থেকে আমদানি ১৯ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে এবং ২০১৯ সালের তুলনায় অনেক বেশি আমদানি হয়েছে। উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো থেকে আমদানি বেড়েছে ৬ শতাংশ এবং পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিতে বড় উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে।
২০২২ সালে দেশটি ইউরোপে ৫ কোটি ১৪ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করেছে, যা এর আগের বছরের চেয়ে ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ বেশি এবং রেকর্ড সর্বোচ্চ।
তবে আমদানিতে এর চেয়েও বড় প্রবৃদ্ধি এসেছে আরব উপসাগর থেকে। এক বছরের ব্যবধানে এ অঞ্চল থেকে ইইউ জ্বালানি তেল আমদানি ৭৬ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়িয়েছে, যা মহামারীপূর্ব অবস্থার চেয়েও বেশি।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভের বরাত দিয়ে বানসেরো কস্তা জানায়, মূল্যবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি সত্ত্বেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক বছর ছিল ২০২২।
রেফিনিটিভের তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক লোডিং বেড়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। মোট লোডিংয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০৪ কোটি ৭৩ লাখ টন, ২০২১ সালে যা ছিল ১৮৮ কোটি ৬৩ লাখ টন।
ইউরোপে রাশিয়ার রফতানি ১২ শতাংশ কমলেও মোট রফতানি ১০ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০১ কোটি ৮৫ লাখ টনে। এটি মহামারীপূর্ব রফতানির চেয়ে কিছুটা কম।
একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রও রফতানিতে উল্লম্ফন দেখেছে, এক বছরের ব্যবধানে যা ২২ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া সৌদি আরবের রফতানি বেড়েছে ১৭ শতাংশ। তবে সে তুলনায় পশ্চিম আফ্রিকা ও উত্তর সাগরীয় অঞ্চলের মোট রফতানি গত বছর কমেছে।
চীন বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি তেল ব্যবহারকারী দেশ। গত বছর দেশটিতে জ্বালানিটির আমদানি ৩ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। এর প্রধান কারণ করোনাসংক্রান্ত বিধিনিষেধে নিম্নমুখী চাহিদা। তবে দেশটি রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে জ্বালানি তেল আমদানি বাড়িয়েছে। এদিকে চীনে কমলেও ভারতের আমদানি ১১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে।
এর আগে গত বছরের শেষ নাগাদ সমুদ্রপথে রাশিয়ার জ্বালানি তেল আমদানি পুরোপুরি বন্ধে রাজি হয়েছিল ইইউ। তবে তা আদতে সম্ভব হয়নি। মূলত রাশিয়ার তেলের ওপর হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়ার মতো দেশের বড় ধরনের নির্ভরশীলতা রয়েছে। তাই সাময়িকভাবে পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়ার তেল আমদানির ক্ষেত্রে অনুমোদন দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্র রুশ তেল আমদানির ওপর পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা দেয়। গত বছর যুক্তরাজ্যের রুশ তেল আমদানি ব্যাপকভাবে কমেছে। তবে ব্যর্থ হয়েছে ইউরোপ।
২০২১ সালের নভেম্বরে লিথুয়ানিয়া ও ফিনল্যান্ড তাদের তেলের মোট চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ রাশিয়া থেকে পেয়েছিল।
রাশিয়ার থেকে মুখ ফেরানোর পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর অবশ্য অন্য উৎপাদনকারী দেশ থেকে তেল কিনতে পারতো। তবে সেটা বাস্তবে রূপ নেয়নি।
এসডব্লিউএসএস/১৬১০
আপনার মতামত জানানঃ