বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে শুরু করে সমগ্র পাহাড়ি ভূমিই বিশেষভাবে উর্বরা। পাহাড়ি জমিতে এমনসব ফসলের চাষ হয়, যা দেশের অন্য এলাকায় দেখা যায় না। মূলত পরিবেশগত বৈচিত্র্য ও পাহাড়ের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আবাদ কৃষ্টির কারণেই পাহাড়ের এই এগিয়ে থাকা। কিন্তু অতি উর্বরা এই জমিও পোড়ানো হচ্ছে ইটভাটায়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের পটিয়ায় পাহাড়ি ফসলি জমির উর্বর মাটি (টপ সয়েল) কেটে নিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এছাড়া, গর্ত ভরাট এবং বাড়ির ভিটে তৈরিতেও অবৈধভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে উর্বর মাটি। এতে ফসল উৎপাদনের ক্ষমতা হারাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, তিন বছর ধরে চলছে উর্বর মাটি বিক্রির এ মহাযজ্ঞ। এতে এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ী সাময়িক লাভবান হলেও সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে পরিবেশে। মাটি বহনের ধুলোবালিতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। আগে প্রকাশ্যে মাটি বিক্রি করা হলেও এখন প্রশাসনের নজরদারির কারণে রাতের অন্ধকারে যান্ত্রিক (এক্সকেভেটর) উপায়ে চলছে অবৈধ এ ‘ব্যবসা’।
স্থানীয়রা আরও জানান, প্রতি বছর আমন ধানকাটা শেষে মাটিকাটার মহোৎসব শুরু হয়। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-মে পর্যন্ত চলে এ ব্যবসা। চলতি মৌসুমে গত এক সপ্তাহ ধরে বিক্রির জন্য মাটিকাটার কাজ শুরু হয়েছে। অন্তত ১৫টি চক্র এর সঙ্গে জড়িত।
ছবি: কাউছার আলম
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার কেলিশহর এলাকার মা ফাতেমার মাজারের পূর্ব পাশের সরকারি আবাসন প্রকল্পের কাছে এক্সকেভেটর দিয়ে পাহাড়ি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। বর্তমানে ওই জায়গায় পাঁচটি মেশিন বসিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে, বহনের সময় গাড়ি থেকে মাটি পড়ে পটিয়া-কেলিশহর কার্পেটিং সড়কটি কাদা ও ধুলাবালিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ধুলাবালির কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের সমস্যা তীব্র হচ্ছে। নতুন করে বিভিন্ন এলার্জি ও শ^াসজনিত অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন সড়কের পাশে বসবাস করা মানুষজন।
পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, চলতি ডিসেম্বরে এই থানায় যোগ দিয়েছি। অবৈধ ব্যবসার ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পাহাড়ি জমির মাটিকাটার বিষয়টি অবগত হয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইনামুল হাসান সম্প্রতি এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, অবৈধ মাটিকাটা বন্ধ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহাম্মদ বলেন, অবৈধভাবে মাটিকাটার ব্যবসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসডাব্লিউ/ডিআর/আরা/১৩১০
আপনার মতামত জানানঃ