ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে বিএনপির নেতা-কর্মীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়া মারা গেছেন। নয়ন মিয়া উপজেলার চরশিবপুর গ্রামের রহমত উল্লাহর ছেলে। তিনি উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এর আগে বিকেলে বাঞ্ছারামপুরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়া গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় ওসিসহ ৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি নূরে আলমের ভাষ্য, বিএনপি নেতা-কর্মীরা অস্ত্র কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করলে গুলি চালায় পুলিশ। উপজেলা সদরের মোল্লা বাড়ির সামনে এই ঘটনা ঘটে।
উপজেলা বিএনপি ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় বিএনপির মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলা সদর এলাকায় প্রচারপত্র বিলি করেন। প্রচারপত্র বিতরণ শেষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহের সাবেক ভিপি সায়েদুজ্জামান কামালের নেতৃত্বে উপজেলা সদরে মোল্লাবাড়ি থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করেন।
এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। মিছিলটি উপজেলা সদরের বাজার, বাঞ্ছারামপুর থানা ও উপজেলা পরিষদ এলাকা অতিক্রম শেষে পুনরায় মোল্লাবাড়ির মসজিদের সামনে গিয়ে জড়ো হয়। সেখানে বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি নূরে আলমের নেতৃত্বে পুলিশ জড়ো হয়। পুলিশ এ সময় সায়েদুজ্জামান কামালকে আটক করতে যায়। এক পুলিশের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি থেকে একপর্যায়ে ধাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় নয়ন নামে এক কর্মীর পেটে গুলি লাগলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।
ধাওয়া পালটা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের সময় পুলিশের ছয় সদস্য আহত হন। তারা হলেন- বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি নূরে আলম (৪১), পরিদর্শক (তদন্ত) তরুণ কান্দি দে (৩২), উপ-পরিদর্শক আফজাল হোসেন (৩০) ও বিকিরণ চাকমা (৩২), কনস্টেবল শফিকুল ইসলাম (৩৩) ও বিশ্বজিৎ চন্দ্র দাস (২৬)।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহের সাবেক ভিপি সায়েদুজ্জামান কামাল বলেন, আমরা ৮০০ থেকে প্রায় ১ হাজার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কুমিল্লার বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করি। কোনোরকম উসকানি ছাড়াই পুলিশ অতর্কিত গুলি ছোড়ে। এতে ছাত্রদল নেতা নয়ন গুলিবিদ্ধ হয়।
স্থানীয় লোকজন জানান, সেখানে বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি নূরে আলমের নেতৃত্বে অবস্থান নেন পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ এ সময় সায়েদুজ্জামানকে আটক করতে যায়। একপর্যায়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। এ সময় ছাত্রদল নেতা নয়ন গুলিবিদ্ধ হন।
লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সেখান থেকে তাকে ঢাকায় নেয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির কর্মী রফিকুল ইসলাম ও সাইদুর রহমানকে আটক করেছে।
বাঞ্ছারামপুর পৌর ছাত্রদলের সদস্যসচিব আতাউর রহমান জানান, আগামী ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় অনুষ্ঠেয় বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ উপলক্ষে শনিবার বিকেলে মোল্লাবাড়ি এলাকায় বিএনপি নেতা সাইদুজ্জামান কামালের বাড়িতে প্রস্তুতি সভা করে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে সভা শেষে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে রাস্তায় মহাসমাবেশের লিফলেট বিতরণ করার সময় পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি চালায়। এতে ছাত্রদল নেতা নয়ন পেটে গুলিবিদ্ধ হন।
পুলিশ জানায়, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের ছয় সদস্য আহত হয়েছেন। তারা হলেন বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি নূরে আলম, পরিদর্শক (তদন্ত) তরুণ কান্দি দে, উপপরিদর্শক আফজাল হোসেন ও বিকিরণ চাকমা, কনস্টেবল শফিকুল ইসলাম ও বিশ্বজিৎ চন্দ্র দাস।
এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি নূরে আলম বলেন, বিকেলে বিএনপির এক শ থেকে দেড় শ নেতা-কর্মী আকস্মিক মিছিল নিয়ে থানার সামনে জড়ো হয়ে পুলিশকে উদ্দেশ করে ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করেন। সেখানে টহল দলের দুই কনস্টেবলের কাছ থেকে তারা অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় কনস্টেবল এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়েন।
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীদের হামলায় আমিসহ ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছি। তাদের এক কর্মীও আহত হয়েছে।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া জানান, ছাত্রদল নেতা নয়নের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৫৮
আপনার মতামত জানানঃ