তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন আগামী এপ্রিলে হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা পেছানো হতে পারে। গতকাল সোমবার রুবানা হক পর্ষদের এক ভার্চুয়াল সভায় করোনা ভাইরাসের কারণে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ ৩ থেকে ৬ মাস বৃদ্ধি করতে চাইছে। এখন সংগঠনটির সাবেক সভাপতিরা সম্মতি দিলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে। তবে পর্ষদের আরেকটি অংশ বিরোধিতা করছে। করোনা ভাইরাসের কারণ দেখিয়ে নির্বাচন পেছানোর সিদ্ধান্তকে অনেকেই সহজভাবে নিচ্ছেন না। যেখানে দেশের অন্যান্য নির্বাচন হচ্ছে স্বাভাবিক সেখানে বিজিএমইএর নির্বাচনে করোনার ভিন্ন ভূমিকা দেখানোকে অনেকে বাঁকা দৃষ্টিতেই দেখছেন।
১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৩ জন সভাপতি পেয়েছে বিজিএমইএ। এদের মধ্যে ৯ জন সম্মিলিত পরিষদের এবং ৪ জন ফোরামের। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ছাড়া বাকি সবাই এখনো জীবিত। বিজিএমইএ নির্বাচন নিয়ে ৫ সাবেক সভাপতির মধ্যে ৩ জন জবাবদিহির স্বার্থে সময়মতো নির্বাচনের পক্ষে। তাই বড় কোনো ধরনের ব্যবসায়িক ঝুঁকি না থাকলে সময়মতো নির্বাচনে কোনো বাধা দেখছেন না তারা।
বিজিএমইএ ও সম্মিলিত পরিষদের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘করোনায় তো কোনো কিছু থেমে নেই। দেশে জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে। সবকিছু চলছে। তারপরও আমাদের কাছে ব্যবসায়িক স্বার্থ সবার আগে। আমরা বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই বসব। যদি দেখি সময়মতো নির্বাচন করলে ব্যবসায়িক স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে তবে অবশ্যই আমরা সেটি দেখব।
সাধারণ সদস্য হিসেবে মতামত জানতে চাইলে নিপা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খসরু চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সময়মতো নির্বাচন হওয়া যেকোনো সংগঠনের জন্য ভালো। কয়েক দিন আগে আমার এলাকার (ঢাকা-১৮) সংসদ উপনির্বাচনও হয়েছে। এখন যদি নেতারা মনে করেন পেছালে ভালো হবে তাহলে সেটা করতে পারেন
বিজিএমইএর আরেক সভাপতি ও সাংসদ আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘ দেখেন আমি কিন্তু কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচনে অংশ নিলাম। মহিউদ্দিন ভাই করোনার মধ্যেই সংসদ সদস্য হয়েছেন। আরও অনেক নির্বাচনের উদাহরণ আছে। তারপরও সাবেক সভাপতিরা বসে একটি সিদ্ধান্ত নেব।’
নির্বাচন পেছানোর আবেদনের দুটি কারণ আছে বলে মনে করেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা। তিনি বলেন, প্রথমত করোনাকালীন সংকট মোকাবিলায় বর্তমান পর্ষদ অনেকটা দক্ষ। নতুন পর্ষদের এসব বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লাগবে। এ ছাড়া নির্বাচনে ফোরামের নেতৃত্ব রুবানা হক নাকি রুপা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম দেবেন তা নিয়ে ফোরামের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে এখনো দ্বন্দ্ব চলছে। এখন যদি ৬ মাস বাড়তি সময় পাওয়া যায় তাহলে বিভক্তি দূর করার সময় মিলবে। এ ছাড়া সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও সম্মিলিত পরিষদের সঙ্গে সমঝোতার নির্বাচন করারও সুযোগ থাকল।’
অন্যদিকে বিজিএমইএর পরিচালক মোহাম্মদ নাছির বলেছেন, করোনার মধ্যেও দেশে উপনির্বাচন হয়েছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে। যেখানে সবকিছু হচ্ছে, সেখানে বিজিএমইএর নির্বাচন হতে তো কোনো অসুবিধা নেই। তা ছাড়া যাঁরা নতুন নেতৃত্বে আসবেন, তাঁরা অভিজ্ঞ। ফলে পরিস্থিতি সামলানো নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সহসভাপতি বলেন, বিজিএমইএর নির্বাচনে স্বচ্ছতা আনার জন্য সদস্য প্রতিষ্ঠানের তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। সেটি হওয়ার পর সদস্যদের বায়োমেট্রিক কার্ড দেওয়া হবে। এ ছাড়া ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) বা আমদানিপ্রাপ্যতার অটোমেশনের কাজ চলমান রয়েছে। বিজিএমইএর দুর্নাম ঘোচাতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ দুটি সম্পন্ন করতে তিন থেকে ছয় মাস লাগবে। এ জন্যই বর্তমান কমিটির মেয়াদ বাড়ানো প্রয়োজন।
এসডব্লিউ/কেএইচ/২১০৫
আপনার মতামত জানানঃ