ভারতের উপজাতি মানুষেরা দেশের সামাজিক পরিবেশের অভিভাজ্য অঙ্গ। ভারতের মতো এত বেশি সংখ্যায় এবং এত রকমের জনজাতি পৃথিবীর আর কোনও দেশে নেই। তবে ভালো নেই ভারতের উপজাতিরা।
সমৃদ্ধ শস্য বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও এবং আদিবাসী পরিবারগুলি ২০টি বিভিন্ন শস্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধির কথা জানালেও, ঝাড়খণ্ডের ২৫% আদিবাসী এবং ১৯% অ-আদিবাসী বাসিন্দারা গুরুতর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন।
প্রফেশনাল অ্যাসিস্ট্যান্স ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশন “আদিবাসী জীবিকার অবস্থা ২০২১” শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে দেশটিতে আদিবাসী-উপজাতি জনগোষ্ঠী বর্তমানে যে অসুবিধা ও সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তা তুলে ধরা হয়, যা তাদের জীবনযাত্রার মানকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, প্রতিবেদনটিতে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়, যেমন: উপজাতীয় সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক নীতি কীভাবে তাদের জীবিকার অনুশীলনকে রূপ দেয়, তাদের সম্পদের ঘাটতি, তাদের উপর বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ, পরিবারের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য যেমন: খাদ্য নিরাপত্তা, জমির মালিকানা, আয় এবং সাক্ষরতা প্রভৃতি।
আদিবাসী গ্রামে একই ভৌগলিক এলাকায় অ-আদিবাসী সম্প্রদায়ের তুলনায় উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা কম রয়েছে তাদের জন্য। যার মধ্যে সব আবহাওয়ার রাস্তা, টেলিফোন, শিক্ষাগত সুবিধা, স্বাস্থ্য অবকাঠামো ইত্যাদি রয়েছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ম্যাট্রিকুলেশন এবং উচ্চ মাধ্যমিক সহ শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে আদিবাসী সম্প্রদায়ের অবস্থা অ-আদিবাসী জনসংখ্যার তুলনায় শোচনীয় এবং অনেক খারাপ।
প্রতিবেদনে রাষ্ট্রের পরিকল্পনার অধীনে উন্নয়নের ধারণা এবং এর পরিণতি নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। একজন বিশিষ্ট আদিবাসী পরিবেশবাদী এবং সমাজকর্মী সাইমন ওরাওঁ মিঞ্জ বলেন, সরকারি কোনো পরিকল্পনাই আদিবাসীদের উপকারে আসতে পারেনি।
আদিবাসী গ্রামে একই ভৌগলিক এলাকায় অ-আদিবাসী সম্প্রদায়ের তুলনায় উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা কম রয়েছে তাদের জন্য।
আদিবাসীরা তাদের গ্রামের উন্নয়নের জন্য নিজেদের ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে। অর্চনা সোরেং নামে ওডিশার একজন সুপরিচিত আদিবাসী কর্মী বলেছেন, বাইরে থেকে উন্নয়নের বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি আরোপ করা প্রকৃতির সাথে আমাদের সম্পর্ককে বদলে দিতে পারে। কিন্তু (বাহ্যিক চাপের কারণে) অর্থনৈতিক পেশার পরিবর্তন বলতে পারে না আমরা আদিবাসী, না অ-আদিবাসী। আমাদের পরিচয় আরও বেশি মূলে।
ভারতে আদিবাসী জনজাতি এখনও জনজীবনের মূলস্রোত থেকে প্রায়ই বিচ্ছিন্ন। বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার মধ্যে ভারতীয় উপজাতি সমাজের জীবনচক্র সংঘটিত হয়।ভারতের উপজাতি সমাজের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলি বহুবিধ।
ভারতের আদিবাসীরা মূলত অরণ্যের ফলমূল সংগ্রহ করে, বন পরিষ্কার করে, বনের মধ্যে ফাঁকা জমিতে কৃষিকাজ করে নিজেদের জীবন অতিবাহিত করে। কিন্তু বর্তমানে অরণ্য হ্রাস পাওয়ায় এবং নতুন করে অরণ্য ছেদনে বিধিনিষেধ আরোপিত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই উপজাতিদের অরণ্য থেকে জীবিকা সংগ্রহের সুযোগ প্রায় চলে গেছে।
এদিকে ভারতের ১৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন দেশটির বিরোধী দলগুলোর প্রার্থী যশবন্ত সিনহা এবং এনডিএ প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু। প্রায় চার হাজার ৮০০ জন সংসদ সদস্য ও বিধায়ক ভোট দেন এ নির্বাচনে। নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশটির সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে শপথ নেন দ্রৌপদী মুর্মু । তিনিই ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায়ের নাগরিক হিসেবে প্রথম রাষ্ট্রপতি হলেন।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, গভীর সাম্প্রদায়িক মানসিকতা, ধর্ম ও বর্ণভিত্তিক সহিংসতা ভারতের নিয়তি। নিম্নবর্ণে জন্মগ্রহণ করলে, উচ্চ বর্ণের ছায়াতেও হাঁটতে পারে না। একজন উচ্চ বর্ণের পরিবারে জন্ম নেয়ার কারণে তিনি পবিত্র। বিশ্বে ভারত এক নির্লজ্জ সাম্প্রদায়িক মানসিকতা, বর্ণ ও বর্ণভিত্তিক লিঙ্গবৈষম্যের উদাহরণ। সেখানে ভারতের আদিবাসী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে সাম্প্রদায়িক ও বর্ণভিত্তিক বৈষম্যকে কি ঢাকা সম্ভব?
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০২৪
আপনার মতামত জানানঃ