মানবাধিকার সংগঠন ও অধিকারভিত্তিক অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী লেখম মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে এ আইন নিয়ে বিতর্ক এবং সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ এ আইন অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়রানির এবং অপব্যহারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসবের মধ্যেই প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে টিকটকে ভিডিও তৈরি করায় মো. মহি উদ্দিন ওরফে মান্না (২৫) নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কথিত কটূক্তি ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
গতকাল রোববার(১৪ আগস্ট) রাতে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দক্ষিণ বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মহি উদ্দিনের বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মুছেগুল গ্রামে। তবে বর্তমানে তিনি বিয়ানীবাজারের মোল্লাপুর গ্রামে বাসা ভাড়া করে থাকেন এবং সেখানে একটি চায়ের দোকান চালান।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মহি উদ্দিন তার নিজের টিকটক অ্যাকাউন্টে প্রধানমন্ত্রীকে কথিত কটূক্তি করেন এবং হত্যার হুমকি দেন। এ ঘটনায় বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল হক (২৪) অভিযোগ জানালে সেটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে অভিযান চালিয়ে মহি উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায় বলেন, গ্রেপ্তার মহি উদ্দিনকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মহি উদ্দিন তার নিজের টিকটক অ্যাকাউন্টে প্রধানমন্ত্রীকে কথিত কটূক্তি করেন।
এদিকে গত শনিবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তির অভিযোগে এক তরুণকে জকিগঞ্জের সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে কালো আইনের মাধ্যমে সরকার তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়। কেউ যেন এই সরকারের নানা দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারে, সেই জন্যই এই সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট তৈরি করে মানুষের মুখ বন্ধ রাখতে চায়।
তারা বলেন, আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা— এটা সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। যে অধিকার আইন করেও খর্ব করা যায় না। দুর্ভাগ্যবশত আজকে স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তী উদযাপন করার পরও আমরা এই স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি।
তারা বলেন, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার যেখানে স্বীকৃত, সেখানে তার অপব্যবহার হতেও পারে। তবু সেই অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসনের কথা স্মরণ করতে পারি: ‘জনগণের ইচ্ছাই যেকোনো সরকারের একমাত্র বৈধ ভিত্তি; আর আমাদের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করা।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৫০
আপনার মতামত জানানঃ