জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশ চলার সময় রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, রাজধানীর শাহবাগে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশ চলার সময় আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আজ সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে শাহবাগ মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শেষের দিকে ছিল। এমন সময় পুলিশের রমনা জোনের অতিরিক্ত কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে একটি দল তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশের মারধরে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে পুলিশের লাঠির আঘাতে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাবি শাখার কর্মী সামি আব্দুল্লার মাথায় ১৪টি সেলাই লেগেছে। এছাড়া ঢাবির আহ্বায়ক জাবির আহমেদের মাথায় ৬টি সেলাই লেগেছে। পুলিশি হামলার প্রতিবাদে সোমবার (৮ আগস্ট) বেলা ১২ টায় মধুর ক্যান্টিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রাত ৯টা থেকে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবিতে ‘বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন শ্রমিক নেতা রুহুল আমিন।
রোববার অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি সমাবেশ পালনকালে তাদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে, এতে তাদের সঙ্গে থাকা দুই শিক্ষার্থী আহত হয়।
এদিকে, একইদিনে জ্বালানি তেলের বাড়ানো দাম প্রত্যাহার এবং লোডশেডিংয়ের কমিয়ে আনার দাবিতে পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কমর্সূচি পালন করেন প্রগতিশীল বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতারা। ‘প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহে’র ব্যানারে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে শাহবাগে সমাবেশ পালন করার সময় পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত শিক্ষার্থীসহ ১৫ জন আহত হয়েছে বলে জানান তারা। আহতদের মধ্যে ৬ জনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কর্মসূচি যখন শেষের দিকে তখন পুলিশ প্রতিবাদকারীদের উপর লাঠিচার্জ করেন। শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়ে প্রতিবাদকারীরা তাদের কর্মসূচি পালন করছিলেন। এসময় তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।
এতে শিক্ষার্থী মো: সুলাইমান মিয়া, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর ঢাবি সংগঠক সামি আবদুল্লাহ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের স্কুল বিষয়ক সম্পাদক ফেরদৌস বাঁধন,ছাত্র ইউনিয়নের বৃহত্তর লালবাগ থানা আহ্বায়ক শান্তা ইসলামসহ আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এর প্রতিবাদে আগামীকাল বিক্ষোভ সমাবেশ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ।
হামলার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের কমর্সূচি যখন শেষের দিকে, তখন পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এতে ১০ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।’
শ্রমিক নেতা রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা গতকাল রাত ৯টা থেকে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। আজকে সমাবেশ করতে গেলে পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এতে অবস্থানকারী দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। দুজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।’
হামলার বিষয়ে চেষ্টা করেও পুলিশের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মওদূত হাওলাদারকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অনিক রায় বলেন, ‘বিকেল সাড়ে ৫টায় প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহের ব্যানারে আমরা বিক্ষোভ সমাবেশ নিয়ে শাহবাগ যাই। মোড়ের পাশে যে টিভিটা আছে সেটার নিচে দাঁড়িয়ে আমরা আমাদের সমাবেশ শুরু করি। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে তাড়াতাড়ি সমাবেশ শেষ করতে বলা হয়।
‘আমরা তাদের বলি, আমাদের সভাপতির বক্তব্য বাকি। তার বক্তব্যের পর আমরা চলে যাব। ঠিক সে সময় একজন পুলিশ আমাদের এক কর্মীকে আক্রমণ করে বসে। এরপর সঙ্গে সঙ্গে চতুর্দিকে থাকা পুলিশ আমাদের ওপর অতর্কিত লাঠিপেটাসহ হামলা করে। বিনা উসকানিতেই তারা আমাদের ওপর আক্রমণ করেছে।’
পুলিশের হামলার পর শাহবাগ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে সংগঠনসমূহের নেতাকর্মীরা সমাবেশ করেন।
সমাবেশে অনিক রায় বলেন, ‘এই ফ্যাসিবাদী সরকার মধ্যরাতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। এই বৃদ্ধির মাধ্যমে নানা উসকানি দেওয়া হচ্ছে। তারা বলছেন, আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী জ্বালানি তেলের ওপর দেওয়া ভর্তুকি কমানো হয়েছে। কৃষিজ পণ্যের ওপর থেকেও ভর্তুকি সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ইউরিয়া সারের দাম বেড়েছে। বাংলাদেশকে নষ্ট করে দেয়ার ষড়যন্ত্র এটি।’
উল্লেখ্য, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা এবং পেট্রলের দাম ৪৪ ও অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়ায় সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় ডিজেলে লিটারে ৪২ টাকার বেশি লোকসান হতো। দাম বাড়ানোর পর এখনও ৮ টাকার বেশি লোকসান হবে।
জ্বালানি তেলের এত বেশি হারে দাম এর আগে কখনও বাড়েনি দেশে। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে একেবারে সাধারণ মানুষ এর সমালোচনা করছে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির সমস্যায় থাকা দেশে নতুন করে পণ্যমূল্য বাড়বে বলে শঙ্কার কথা বলাবলি হচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিবহনে বর্ধিত খরচের বিষয়টি আছে।
এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে কিলোমিটারপ্রতি ৩৫ পয়সা এবং দূরপাল্লায় ৪০ পয়সা করে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে সরকার যতটা ভাড়া ঠিক করে দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি আদায় হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে শাহবাগ এলাকায় অবস্থান নেন বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেখানে হামলার বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি অনিক রায় বলেন, ‘এই হামলার কারণে আমাদের আন্দোলন দমে যাবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের বিজয় নিশ্চিত হবে।
‘আগামীকাল দুপুর ১২টায় মধুর ক্যান্টিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল হবে। সেই মিছিল-পরবর্তী সমাবেশ থেকে আমরা কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে এডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমি কাউকে হামলা বা লাঠিচার্জ করিনি। যে অভিযোগের ভিত্তি নেই সে সম্পর্কে মন্তব্য করতে চাই না’। এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসির সাথে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেনি গণমাধ্যম।
এসডব্লিউ/এসএস/২১২২
আপনার মতামত জানানঃ