যুক্তরাজ্যের হোম সেক্রেটারি প্রীতি প্যাটেল উইকিলিকস-এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে এক আদেশনামায় স্বাক্ষর করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অ্যাসাঞ্জের বিচার হওয়ার কথা রয়েছে।
শুক্রবার (১৭ জুন) অ্যাসাঞ্জের প্রত্যাবাসনের এ অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্যের সরকার। এ ঘটনাকে উইকিলিকস ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য কালো দিন’ বলে অভিহিত করেছে।
এর আগে এপ্রিল মাসে লন্ডনের একটি আদালত অ্যাসাঞ্জকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আদেশ প্রদান করেন। এর ফলে বিষয়টি নিয়ে কয়েক বছরের আইনি লড়াইয়ের সমাপ্তি ঘটে এবং যুক্তরাজ্যের সরকারের জন্য তার প্রত্যাবাসনের আদেশের অনুমোদন দেওয়ার পথে সব বাধা কেটে যায়।
তবে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের এখনো এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রয়েছে। হোম অফিসের আদেশনামার বিবৃতি থেকে জানা গেছে, আপিল করতে চাইলে তাকে আগামী ১৪ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে।
এদিকে শুক্রবার এক বিবৃতিতে উইকিলিকস জানিয়েছে, অ্যাসাঞ্জের প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে ‘উচ্চ আদালতে’ আপিল করা হবে। অ্যাসাঞ্জকে ‘সাংবাদিক ও প্রকাশক’ হিসেবে উল্লেখ করে ওই বিবৃতিতে উইকিলিকস জানায়, তিনি ‘কোনো অপরাধ করেননি এবং তিনি কোনো অপরাধী নন’। ‘নিজের দায়িত্ব পালনের কারণে তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে’।
নিজেদের বিবৃতিতে হোম অফিস জোর দিয়ে জানিয়েছে, অ্যাসাঞ্জের প্রত্যাবাসনের ফলে তার মানবাধিকারের কোনো ক্ষতি হবে বলে এমন কোনো আশঙ্কা দেখতে পায়নি যুক্তরাজ্যের আদালত।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বর্তমানে লন্ডনের উচ্চ-নিরাপত্তাবিশিষ্ট বেলমার্স কারাগারে অবরুদ্ধ আছেন। তিন বছর আগে তাকে লন্ডনে অবস্থিত ইকুয়েডর অ্যাম্বাসি থেকে আটক করে এ কারাগারে রাখা হয়।
২০১০ সালে উইকিলিকস কয়েক হাজার গোপনীয় মার্কিন নথিপত্র প্রকাশ করে দেয়। বর্তমানে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ১৮টি ফৌজদারি অভিযোগের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১৭৫ বছর কারাভোগের আদেশ হতে পারে।
অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো নিয়ে অনেক আইনি লড়াই হয়েছে এখন পর্যন্ত। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে অ্যাসাঞ্জের মানসিক সুস্থতার কারণ দেখিয়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত জানান, তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো হলে তা হবে ‘অন্যায়’।
তবে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যের উচ্চ আদালত সে আদেশ বদলে দেন। উচ্চ আদালত জানান, যদি যুক্তরাষ্ট্র তার চিকিৎসার ব্যপারে নিশ্চয়তা দিতে পারে, তাহলে অ্যাসাঞ্জকে সেখানে পাঠাতে কোনো বাধা নেই।
১৭৫ বছরের জেল!
মার্কিন আইনজীবীরা অ্যাসেঞ্জের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির ১৭টি অভিযোগ এনেছেন। এর মধ্যে একটি অভিযোগ হচ্ছে, হাজার হাজার গোপন সামরিক ও কূটনৈতিক নথি ফাঁসের মাধ্যমে কম্পিউটারের অপব্যবহার করা।
এসব অভিযোগের দায়ে অ্যাসেঞ্জের সর্বোচ্চ ১৭৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। যদিও মার্কিন আইনজীবী বলছেন, উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতাকে এই অভিযোগে সর্বোচ্চ ৬৩ মাস জেল খাটতে হবে।
মার্কিন সরকারপক্ষের আইনজীবী বলেছেন, মার্কিন কর্তৃপক্ষ কথা দিয়েছে যে বিচার শুরুর আগে অ্যাসেঞ্জকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাসম্পন্ন ‘সুপারম্যাক্স’ কারাগারে কিংবা নিঃসঙ্গ সেলে বন্দি রাখা হবে না। আর বিচারে যদি অ্যাসেঞ্জের কারাদণ্ড হয়, তাহলে তাকে তার নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়ায় সাজাভোগ করতে দেওয়া হবে।
তবে মার্কিন আইনজীবীরা অ্যাসেঞ্জের মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মহত্যার ঝুঁকিকে হালকা করে দেখানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অ্যাসেঞ্জের আইনজীবী এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড।
অ্যাসেঞ্জ গত ২ বছর ব্রিটেনের কারাগারে আছেন। তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের। ক্লাসিফাইড ইনফরমেশন ফাঁস করার জন্য ২০১০ সালে তাকে অভিযুক্ত করা হয়, যখন উইকিলিকস নির্যাতনের বিভিন্ন বিশদ তথ্য প্রকাশ করেছিল, যার মধ্য আফগানিস্তান এবং ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর দ্বারা চালানো সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধও ছিল।
তাকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর করা হলে, তার ১৭৫ বছরের সাজা হতে পারে। কিন্তু এতোদিন একজন ব্রিটিশ বিচারক তাকে হস্তান্তরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধকে আটকে দিয়েছিল। এবার সেই পথ মসৃণ হলো।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ
২০১০ সালে উইকিলিকস আলোচনায় আসে৷ তারা তখন ২০০৭ সালের একটি গোপন ভিডিও প্রচার করে, যেখানে বাগদাদে অ্যাপাচি হেলিকপ্টার ব্যবহার করে মার্কিন মিলিটারি ডজনখানেক মানুষকে মেরে ফেলে, যার মধ্যে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সংবাদকর্মী ছিলেন৷
এরপর উইকিলিকস মার্কিন কূটনীতির লাখ লাখ গোপন নথি প্রকাশকরতে শুরু করে৷ সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন থেকে শুরু করে সৌদি রাজপরিবারের সদস্যদের বিষয়ে নানান সমালোচনামূলক বার্তা, আফগান যুদ্ধের মার্কিন অপারেশনের নানা তথ্য ছিল৷
পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরবৃত্তিসহ ১৮টি অভিযোগ আনা হয়৷ যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বিচার করতে চায় সুইডেন৷ ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনে ইকুয়েডরের এম্বেসিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পান৷ ২০১৯ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়
এসডব্লিউ/এসএস/১৯০৮
আপনার মতামত জানানঃ