গণ কমিশন বাংলাদেশে জঙ্গি অর্থায়ন, ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ানো, অর্থপাচার, ওয়াজের নামে টাকা আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ইসলামপন্থী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ১১৬ জনকে ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’ হিসেবে চিহ্নিত করে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকে যে শ্বেতপত্র দিয়েছে, তা নিয়ে এখনই কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না দুদক।
কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান এ প্রসঙ্গে বলছেন যে, শ্বেতপত্রটি পর্যালোচনার পর কোন উপাদান পাওয়া গেলে তা নিয়ে তদন্তের পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, গণকমিশন বিচ্ছিন্নভাবে কিছু তথ্য উপাত্ত দিয়েছে আর শ্বেতপত্রটিও বিশাল। এগুলো পর্যালোচনা করে সেখানে দুদকের আইনে অর্থ পাচার বা কর ফাঁকিসহ অন্য কোন অপরাধ প্রতীয়মান হলে তখন তদন্ত করে দেখা হবে।
প্রসঙ্গত, গণকমিশন একদল বেসামরিক নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি উদ্যোগ যাতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
গত ১২ই মে দুদকে তারা যে শ্বেতপত্র দিয়েছেন তাতে ১১৬ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ‘ধর্ম ব্যবসা, সারাদেশে মৌলবাদী তৎপরতা, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও, অনিয়ম, দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের’ অভিযোগ করা হয়েছে।
শ্বেতপত্রে দাবি করা হয়েছে যে ‘মৌলবাদী গোষ্ঠীকে উস্কানি দিচ্ছে’ প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাও। এমন কয়েকজনের নামও শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ওই তালিকায় যাদের নাম এসেছে তাদের পক্ষে ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন এভাবে তালিকা প্রণয়নের তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, ‘ইসলাম বিদ্বেষ’ থেকেই ‘আলেমদের চরিত্রহনন’ করার জন্য এমন তালিকা করা হয়েছে।
ইসলামপন্থী একটি সংগঠন মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেও এই অভিযোগ করেছে। গণকমিশনের প্রধান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক অবশ্য বলছেন, তালিকায় যাদের নাম এসেছে তারা ‘বিভিন্ন অপরাধে অপরাধী’ তাই তাদের আলেম বলে তারা মনে করেন না।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলছেন, তারা দীর্ঘ নয় মাস তদন্ত করে ২২০০ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্রটি তৈরি করেছেন। এ তদন্তে তারা দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের প্রমাণ যেমন পেয়েছেন তেমনি জঙ্গি কার্যক্রম উস্কে দেয়ার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, এসব কারণেই আমরা দুদককে দিয়েছি যাতে তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে। এটি আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও দিয়েছি।
এ কমিশনের সদস্য সচিব তুরিন আফরোজ বলছেন, ওয়াজের নামে টাকা আদায় করেন কিন্তু কর দেন না এটি প্রমাণিত। মূলত এ কারণেই তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কিন্তু প্রমাণ পেয়েই আমরা এগুলো বলেছি। অসংখ্য মাদ্রাসায় গিয়েছি আমরা। বেশ কিছু গণশুনানি করেছি।
তবে তালিকায় থাকা একজন মাওলানা বেলাল হুসাইন ফারুকি বলছেন, তারা ওয়াজ করেন সাধারণত মসজিদ মাদ্রাসার উন্নয়নে বা কল্যাণের জন্য।
“আমরা টাকা নেব কেন? আর আইন বহির্ভূত কিছু করলে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে। কোন ব্যক্তি বা কয়েকজন ব্যক্তিতো এভাবে আলেমদের চরিত্র হনন করতে পারে না।”
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক অবশ্য বলছেন, তারা কোন আলেমের তালিকা দেননি, বরং যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে তাদের নামই এসেছে।
তিনি বলেন, তারা ঢালাওভাবে সব মাদ্রাসার কথা কিছু বলেননি বরং সুনির্দিষ্টভাবে এক হাজার মাদ্রাসার বিষয়ে কিছু তথ্য দিয়েছেন যা সরকারের দেখা উচিৎ।
বেলাল হুসাইন ফারুকি বলছেন, ইউটিউবে কাটছাঁট বক্তব্য দেখেই ওয়াজ নিয়ে সমালোচনা করা হচ্ছে।
যদিও তুরিন আফরোজ বলছেন, তারা অন্যের কাছ থেকে শুনেই কিছু করেননি বরং প্রত্যেকটি অভিযোগ যাচাই বাছাইয়ের পরেই তালিকাটি চূড়ান্ত করেছেন তারা।
গণকমিশন ১১৬ জনের নাম সম্বলিত শ্বেতপত্র দুদকে দেয়ার পরে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইসলামপন্থী সংগঠন জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ।
এ পরিষদ ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে যে, ওয়াজ বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি এবং এতে উলামাদের আর্থিক সম্পৃক্ততা কম। আর মাদ্রাসাগুলোর বিষয়ে আগেও কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
বেলাল হুসাইন ফারুকিও একই দাবি করে বলেন, গণকমিশন যা করেছে সেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের জন্য ইসলামী পণ্ডিতদের দায়ী করা হয়েছে কিন্তু অন্য কারও সম্পর্কে কোন কিছু বলেনি যা প্রমাণ করে যে আসলে ইসলাম ধর্মকেই এখানে টার্গেট করা হয়েছে।
তবে তুরিন আফরোজ বলছেন যে তারা কাউকে টার্গেট করেননি। এখানে তাদের নাম যেমন এসেছে তেমনি প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের নামও এসেছে। কিছু ঘটনায় আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের লোকজনের নামও এসেছে। কিন্তু ধর্ম ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়েছে কারণ তাদের বিষয়ে সত্যিটাই বলা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৫০
আপনার মতামত জানানঃ