সম্প্রতি লাওসের একটি গুহায় এক লক্ষ ৩০ হাজার বছরের পুরনো একটি মানুষের দাঁত খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা। প্রাথমিক ভাবে এটি একটি শিশুর দাঁত বলে মনে করা হচ্ছে। খবর আনন্দবাজার
মঙ্গলবার(১৭ মে) একটি গবেষণায় জানানো হয়েছে, উদ্ধার হওয়া এই শিশুর দাঁত মানুষের বিবর্তন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের আরও বেশি তথ্য জানতে সাহায্য করবে।
গবেষকদের দাবি, এই দাঁতটি মানুষের পূর্বপুরুষ ডেনিসোভান প্রজাতির। ডেনিসোভান প্রজাতি মানবজাতির বিলুপ্ত একটি শাখা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উষ্ণ ক্রান্তীয় অঞ্চলে এই প্রজাতির বসবাস ছিল বলে মনে করা হয়।
মানবজাতির বিলুপ্ত আর একটি শাখা নিয়ানডারথালদের সঙ্গে ডেনিসোভান শাখার সম্পর্ক ছিল বলে ধারণা করা হয়। যদিও ডেনিসোভান শাখা সম্পর্কে খুবই কম তথ্য রয়েছে বিজ্ঞানীদের হাতে।
২০১০ সালে সাইবেরিয়ার গুহায় কাজ করার সময় ডেনিসোভান শাখার খোঁজ পান গবেষকরা। এর আগে এই শাখার বিষয়ে বিজ্ঞানীদের কোনও ধারণা ছিল না। গুহার মধ্যে এক মহিলার আঙুলের হাড় খুঁজে বের করার সময় তারা প্রথম এই শাখার খোঁজ পান।
সাইবেরিয়ার ডেনিসোভা গুহায় প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় বলে মানুষের পূর্বপুরুষের এই প্রজাতির নাম দেওয়া হয়েছে ডেনিসোভান।
শুধুমাত্র একটি আঙুলের হাড় এবং একটি ছোট দাঁতের জিনের গঠন নিয়ে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা পুরো প্রজাতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেয়েছেন।
পরে ২০১৯ সালে তিব্বত মালভূমিতে একটি চোয়ালের হাড় খুঁজে পাওয়া যায়। এই চোয়ালের হাড়ও ডেনিসোভান শাখার বলে গবেষকরা জানান। গবেষকরা এ-ও ধারণা করেন, এই প্রজাতির কিছু মানুষ চিনেও বসবাস করতেন।
শুধুমাত্র একটি আঙুলের হাড় এবং একটি ছোট দাঁতের জিনের গঠন নিয়ে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা পুরো প্রজাতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেয়েছেন।
ডেনিসোভানরা অদৃশ্য হওয়ার আগে সামান্য চিহ্ন রেখে গিয়েছিল। তবে ডিএনএ-র কোনও খোঁজ বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল না।
অস্ট্রেলিয়ান এবং পাপুয়া নিউ গিনির আদিবাসীদের মধ্যে মানুষের পূর্বপুরুষের ডিএনএ-র পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মানুষের আধুনিক পূর্বপুরুষের সঙ্গে ডেনিসোভানদের যোগ ছিল বলেও বিজ্ঞানী ক্লেমেন্ট জানোলি জানিয়েছেন।
‘ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চ’-এর গবেষক ক্লেমেন্ট জানান, সাইবেরিয়া বা তিব্বতের পর্বত থেকে দূরে এশিয়া মহাদেশের এই অংশে ডেনিসোভানদের উপস্থিতির কোনও প্রমাণ নেই।
তবে এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয় যখন বিজ্ঞানীদের একটি দল উত্তর-পূর্ব লাওসের কোবরা গুহায় অনুসন্ধান শুরু করেন। ২০১৮ সালে টাম পা লিং গুহার পাশের একটি গুহায় এই দাঁতটি খুঁজে পাওয়া যায়।
দাঁতের বাইরের অংশের প্রোটিন পরীক্ষা করার পর গবেষকরা জানিয়েছেন, এই দাঁত সম্ভবত সাড়ে তিন থেকে সাড়ে আট বছর বয়সি এক নাবালিকার।
তাপ এবং আর্দ্রতার কারণে দাঁতটির ডিএনএ অনেকাংশেই নষ্ট হয়ে যায়।
দাঁতের আকৃতি বিশ্লেষণ করার পর বিজ্ঞানীরা মনে করছেন এই দাঁত সম্ভবত ডেনিসোভান মানবের। এক লক্ষ ৩০ হাজার বছর থেকে এক লক্ষ ৬৪ হাজার আগে ডেনিসোভান মানবের অস্তিত্ব ছিল বলেও ধারণা বিজ্ঞানীদের।
দাঁতের অভ্যন্তরীণ গঠন তিব্বতি ডেনিসের নমুনায় পাওয়া মোলারের মতোই ছিল। এটি ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনে বসবাসকারী আধুনিক মানুষ এবং অন্যান্য প্রাচীন প্রজাতির থেকে স্পষ্টতই আলাদা ছিল।
দাঁতের গঠনে নিয়ান্ডারথালদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল, যারা জেনেটিক্যালি ডেনিসোভানদের কাছাকাছি ছিল। দুটি প্রজাতি প্রায় ৩,৫০,০০০ বছর আগে ভিন্ন হয়ে গেছে বলে মনে করা হয়।
গবেষকরা উপসংহারে পৌঁছেছেন যে এটি ডেনিসের একটি নমুনা, কারণ পূর্বে এখনও পর্যন্ত নিয়ান্ডারথালদের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
আবিষ্কারটি দেখায় যে, ডেনিসোভানরা এশিয়ার এই অংশটি দখল করেছিল এবং ঠান্ডা উচ্চতা থেকে গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়েছিল, যখন তাদের নিয়ানডারথাল কাজিনরা ঠান্ডা পশ্চিম অঞ্চলের জন্য আরও ‘বিশেষ’ বলে মনে হয়েছিল।
শেষ ডেনিসোভানরা তাই আধুনিক মানুষের সাথে মিলিত হতে এবং আন্তঃপ্রজনন করতে সক্ষম হয়েছিল, যারা প্লেইস্টোসিন যুগে তাদের জিনগত ঐতিহ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আধুনিক জনগোষ্ঠীতে প্রেরণ করেছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০২১
আপনার মতামত জানানঃ