জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাস করে ভারতে। কিন্তু দেশটিতে ক্রমশই হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনকি ভারতের ৯টি রাজ্যে রীতিমতো সংখ্যালঘু মর্যাদা পাওয়ার দাবি করেছে হিন্দুরা। আদালতকে তারা বলেছে, হিন্দুদের সংখ্যালঘু হিসেবে মর্যাদা দেয়া হোক। নতুবা বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছেন তারা।
ভারতের একাধিক রাজ্যে হিন্দুদের সংখ্যালঘু তকমা দেওয়ার বিষয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় মোদি সরকার। সুপ্রিম কোর্টে জমা করা এক হলফনামায় এমনটাই জানাল কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এর আগেই কেন্দ্র জানিয়েছিল যে হিন্দুদের ‘সংখ্যালঘু’ মর্যাদা দেয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে দায়িত্ব দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এবার এই মামলায় নয়া এক হলফনামায় কেন্দ্রের তরফে জানানো হল যে বিভিন্ন রাজ্য এবং এই মামলার সঙ্গে যুক্ত পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে হিন্দুদের ‘সংখ্যালঘু’ তকমা দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে।
এর আগে এই মামলায় কেন্দ্রের অবস্থান ছিল, রাজ্যই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে এবার খানিকটা অবস্থান পালটে রাজ্যগুলির সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনার টেবিলে বসার কথা বলল কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে যে কেন্দ্রীয় সরকার খ্রিস্টান, শিখ, মুসলিম, বৌদ্ধ, পার্সি এবং জৈন নামে ছয়টি সম্প্রদায়কে জাতীয় স্তরে সংখ্যালঘু হিসাবে অবহিত করেছে। রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে হিন্দুদের একটি ধর্মীয় বা ভাষাগত সংখ্যালঘু হিসাবে অবহিত করতে পারে যদি সেখানে হিন্দুরা সংখ্যায় কম থাকে।
উদাহরণ স্বরূপ কেন্দ্র বলে, ২০১৬ সালে মহারাষ্ট্র সরকার ইহুদিদের সংখ্যালঘু মর্যাদা দিয়েছিল। কর্ণাটক সরকার উর্দু, তেলেগু, তামিল, মালায়লাম, মারাঠি, টুলু, লামানি, হিন্দি, কোঙ্কনি এবং গুজরাটিকে সংখ্যালঘু ভাষা তকমা দিয়েছিল।
এর আগে প্রতিটি রাজ্যে জনসংখ্যার ভিত্তিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের শ্রেণী ভাগ করার জন্য একটি পিটিশন জমা দিয়েছিলেন দিল্লির বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী অশ্বিনী কুমার উপাধ্যায়। এই প্রেক্ষিতে একটি আবেদন দায়ের করে ন্যাশনাল কমিশন ফর মাইনরিটি এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশনস (এনসিএমইআই) অ্যাক্ট ২০০৪-এর ধারা ২(এফ)-এর বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন।
এই ধারা অনুযায়ী পাঁচটি ধর্মীয় সম্প্রদায়— মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ এবং পার্সি সংখ্যালঘু তকমা পায় দেশে। যদিও উপাধ্যায়ের আবেদন অনুসারে, ভারতের ৯টি রাজ্যে সংখ্যালঘু হিন্দুরা।
১৩০ কোটি মানুষের দেশ ভারতে রয়েছে ২৮টি রাজ্য ও ৯টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। এই রাজ্য–কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে ৯টিতে হিন্দুরা সংখ্যালঘু। এগুলো হলো—মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, মণিপুর, অরুণাচল, পাঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীর, লাক্ষাদ্বীপ ও লাদাখ।
জানা গেছে, আইনজীবী অশ্বিনী কুমার উপাধ্যায় একটি জনস্বার্থ মামলায় দাবি জানিয়েছিলেন- মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব, লাক্ষাদ্বীপ, লাদাখ ও কাশ্মিরসহ যে নয়টি রাজ্যে হিন্দুরা সংখ্যালঘু অবস্থানে রয়েছে সেখানে কেন তারা এই স্ট্যাটাস ভোগ করে অন্য সংখ্যালঘুদের মতো শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে না? সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় কেন্দ্রকে নোটিশ পাঠায়।
তার জবাবে কেন্দ্রীয় সরকার জানায়— ভাষা, নাগরিক সংখ্যার ভিত্তিতে কোনো জনগোষ্ঠী যদি সংখ্যালঘু হয় তবে তারা সংখ্যালঘু স্ট্যাটাস পেতে পারে। ভারতের অন্তত নয়টি রাজ্যে হিন্দুরা সংখ্যালঘু অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু ভারতের সংখ্যালঘুর তালিকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের নাম নেই। তাই তারা বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সাহায্য পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় সরকারি সুবিধাদি পাওয়ার জন্য তাদেরকে লংখ্যালঘু তকমা দেয়া হোক। তাহলে কেন্দ্রের বিভিন্ন সংখ্যালঘু প্রকল্পের অংশীদার হতে পারবে হিন্দুরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫২
আপনার মতামত জানানঃ