পোভেগ্লিয়া দ্বীপ। পোভেগ্লিয়া ভেনিস এবং লিডোর মাঝে অবস্থিত উত্তর ইতালির ছোট্ট এই দ্বীপের আছে নির্মম এক ইতিহাস। লেগুন সেইন্ট মার্ক্স চত্বরে অবস্থিত এই দ্বীপটি ‘পোভেগ্লিয়া ভেনিস’ বা ‘ইজোলা দি পোভেগ্লিয়া’ হিসেবেও পরিচিত।
বাইরে থেকে দেখলে যে কেউই দ্বীপটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবেন। কিন্তু দ্বীপের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে সেই ধারণা পুরোপুরি পাল্টে যাবে।
বলা হয়ে থাকে, দ্বীপটির ১৭ একর জায়গার প্রত্যেকটি স্থানে অতৃপ্ত আত্মারা ঘুরে বেড়ায়। বলা হয়ে থাকে, দ্বীপটির উপরে অন্য কারো কর্তৃত্ব এই আত্মারা মেনে নেয় না। আর তাই ১৯৬৮ সালের পর থেকে এখনো পর্যন্ত কেউই এই দ্বীপ দখলের চেষ্টা করেনি। বেশ কিছু ভয়ংকর ঘটনার সাক্ষী রহস্যময় এই দ্বীপটি জনসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ।
এই সকল ভয়ংকর ঘটনার শুরু হয়েছিল ১৩৪৮ সালে। সেই বছর এই দ্বীপে দুইটি জাহাজ এসে ভেড়ে। যেই জাহাজগুলোর যাত্রীদের মধ্যে প্লেগ রোগ দেখা দেয়। সেই সময় দ্বীপটি ছিল জনশূন্য। ভেনিস দ্বীপের চারপাশে পাঁচটি অষ্টভুজ আকৃতির খাল নির্মাণ করে সমগ্র দ্বীপকে সৈন্য দিয়ে রক্ষা এবং নিয়ন্ত্রণ করে রাখতো। তখন পোভেগ্লিয়া জাহাজ ভেড়ার জন্য বন্দর হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
জনশূন্য এই দ্বীপে যেই দুইটি জাহাজের কর্মী এবং যাত্রীদের মধ্যে প্লেগ রোগ দেখা দেয়, তাদের আর অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়া হয়নি। আর তাই এই রোগ মহামারি আকারে দ্বীপসহ আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
তখন অসুস্থ রোগীদের জন্য কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো এই দ্বীপকে। যখনই কেউ প্লেগ রোগে আক্রান্ত হতো তাকে ছেড়ে আসা হতো প্রায় জনমানবহীন নির্জন এই দ্বীপে। সেখানে একাকী হয়ে মৃত্যুর জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হতো।
তবে যতই দিন যেতে লাগলো মহামারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে লাগলো। চিকিৎসা করেও কোনো লাভ হচ্ছিল না। তাই সরকারি এক সিদ্ধান্তে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার প্লেগ আক্রান্ত মানুষকে এই দ্বীপে পুড়িয়ে মারা হয়।
তখন থেকেই দ্বীপের সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মৃত মানুষের কঙ্কাল। এই সকল ঘটনার পরপরই মৃত্যুপুরী হিসেবে পরিচিতি পায় এই দ্বীপটি। এটি সাধারণ মানুষের কাছে হয়ে ওঠে এক রহস্যময় দ্বীপ।
১৯২২ সালে ইতালির সরকার পোভেগ্লিয়াতে একটি মানসিক হাসপাতাল তৈরি করেন। তবে সেই হাসপাতালে কোনো ডাক্তার, নার্স কিংবা কর্মীরা কাজ করতে চাইতেন না। কিছুদিন কাজ করার পরেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতেন অন্য কোথাও। তাদের ভাষ্যমতে, প্রতি মুহূর্তেই তারা সেখানে অশরীরী কিছুর উপস্থিতি টের পেতেন।
আর সেই হাসপাতালে রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠার বদলে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়তেন। এমনকি লোকমুখে জানা যায়, হাসপাতালের পরিচালক পাগল হয়ে হাসপাতালের ছাদ থেকে লাভ দিয়েছিলেন। আর এই ঘটনার দ্বীপটিকে নিয়ে প্রচলিত ভৌতিক কাহিনীগুলোতে এক নতুন মাত্রা যোগ করে।
পরবর্তীতে একপ্রকার বাধ্য হয়েই ইতালির সরকার ১৯৬৮ সালের পর থেকে হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে এই দ্বীপটিতে ভাঙাচোরা হাসপাতাল, একটি গোয়াল ঘর আর একটি উপাসনা কেন্দ্র ছাড়া আর কিছুই নেই। সাধারণ মানুষ কিংবা পর্যটকদের প্রবেশ করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কেউ যদি একান্তই দ্বীপটিতে প্রবেশ করতে চায়, তবে তার জন্য নিতে হবে বিশেষ অনুমতি।
দ্বীপটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও একজন মার্কিন উপস্থাপক সেখানে ভ্রমণ করে আসেন। তিনি মার্কিন টেলিভিশনের জন্য দ্বীপ আর নিষিদ্ধ হাসপাতালকে কেন্দ্র করে একটি রোমাঞ্চকর সিরিজ তৈরি করেন। যেখানে তিনি তুলে ধরেছেন এই দ্বীপে তার নানা ভয়ংকর ভুতের অভিজ্ঞতা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯৫০
আপনার মতামত জানানঃ