১৭৯৪ সালে, প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের আমলে মদের অভাবে তৈরি হয়েছিল গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি। ১৭৮৯ সালে জর্জ ওয়াশিংটন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ভার গ্রহণ করার সময় দেশের অর্থনীতির অবস্থা মোটেই সুবিধার ছিল না। অর্থনীতির হাল ফেরাতে দেশের অর্থ বিভাগের সচিব তথা কর্তাব্যক্তিদের পরামর্শে তিনি সিদ্ধান্ত নেন রাজকোষ ঘাটতি পূরণ করতে কর চাপানো হবে হুইস্কির উপর।
১৭৯১ সালে মার্কিন কংগ্রেসে পাশ হয়ে যায় এই বিল। কিন্তু এই কর আদায় করতে গিয়ে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেটাকেই মনে করা হয় ওয়াশিংটনের শাসনকালের অন্ধকারতম দিক।
হুইস্কি সেই সময় মার্কিনিদের মধ্যে জনপ্রিয়তম পানীয়। কিন্তু হুইস্কিতে কর বসানোর ফলে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ছোট উৎপাদনকারীরা। এছাড়াও কর বসানোর ফলে স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায় হুইস্কির দাম, যা মোটেই খুশি করেনি সাধারণ মার্কিন জনগণকেও।
সমস্যা আরও বৃদ্ধি পায় যখন বলা হয় যে, এই কর আদায় করা হবে নগদ অর্থেই। কারণ সেই সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নগদ অর্থে লেনদেনের ধারণা প্রচলিত হয়নি আমেরিকাতেও। উপরন্তু, বেশি উপার্জনের লক্ষ্যে বেশ কিছু কৃষক পরিবার তাদের উৎপাদিত ফসল থেকে হুইস্কি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন। এই নয়া নীতির ফলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন তারাও।
হুইস্কি তৈরিতে বিশেষ সুখ্যাতি ছিল পেনসিলভেনিয়ার কৃষকদের। তারাই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এছাড়াও মদ উৎপাদন সংক্রান্ত আরও নানান নিয়ম-কানুন জারি করে ওয়াশিংটন সরকার। যে কোনও একটি নিয়ম বিধি না মানলেই অভিযুক্ত উৎপাদনকারীকে হাজিরা দিতে হত ফিলাডেলফিয়ায় সরকারি আদালতে।
পেনসিলভেনিয়া থেকে ফিলাডেলফিয়ার দূরত্ব ছিল প্রায় ৩০০ মাইল। প্রাথমিক ভাবে এই নয়া আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে কর দেওয়া বন্ধ করে দেন সেখানকার কৃষকেরা। কিন্তু কৃষক অসন্তোষ চরমে ওঠে যখন তাদের থেকে কর আদায় করতে বাহিনী পাঠানো হয় পেনসিলভেনিয়ায়।
ব্যাপক হিংসাত্মক রূপ নেয় প্রতিরোধের চেহারা। জর্জ ওয়াশিংটনের শাসনকালের এই ঘটনাই পরিচিত ‘হুইস্কি রেবেলিয়ন’ বা ‘হুইস্কি বিপ্লব’ হিসেবে।
যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট কড়া হাতেই দমন করতে চেয়েছিলেন এই বিশৃঙ্খলা। ১৭৯৪ সালে তিনি মার্কিন সেনা মার্শাল ডেভিড লেননকে পেনসিলভেনিয়া পাঠান অনিচ্ছুক করদাতাদের শায়েস্তা করতে। ফল হয় উল্টো; আরও বেশি ক্ষেপে ওঠেন হুইস্কি উৎপাদনকারীরা। আগুন লাগানো হয় বেশ কিছু কর সংগ্রহকারকের বাড়িতেও।
এদিকে হুইস্কি অমিল হওয়ায় শহরে ক্ষেপে ওঠেন পানীয় প্রিয় মানুষেরাও। পিটার্সবার্গ অঞ্চলে প্রায় সাত হাজার বিক্ষোভকারী তীব্র বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক পিপে হুইস্কি পাঠিয়ে তা সামাল দেওয়া হয়েছিল বলে শোনা যায়।
কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশই হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে প্রায় ১৩ হাজার সৈন্যকে একত্রিত করেন ওয়াশিংটন। মদ প্রস্তুতকারকদের বিক্ষোভ সামাল দেওয়ার জন্য তিনি নিজে ঘোড়ায় চেপে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই বিপুল সেনাবাহিনীর!
যদিও বিক্ষোভ দমনের পর যে সকল উৎপাদনকারীকে আটক করা হয়েছিল, পরবর্তীতে তাদের সকলকেই মুক্ত করে দেওয়া হয়। পরিবর্তন আনা হয় কর কাঠামোতেও।
প্রথম মেয়াদেই স্থির ভাবে গোটা পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন প্রশংসিত হলেও, এই ঘটনার প্রভাবেই জর্জ ওয়াশিংটন আর প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে পারেননি বলে মনে করেন রাজনৈতিক ইতিহাসবিদদের একাংশ।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯০০
আপনার মতামত জানানঃ