এই ডিসেম্বরেই পাঁচটি গ্রহাণু ধেয়ে আসছে পৃথিবীত দিকে। তার মধ্যে একটি গ্রহাণুর আকার প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের থেকেও বড়। অন্য একটি গ্রহাণু পৃথিবীর মাত্র ৩০ লক্ষ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসবে। গতিপথের সামান্য পরিবর্তনেই ঘটতে পারে ভয়াবহ বিপদ।
৪৫০ কোটি বছর আগে যখন পৃথিবী, মঙ্গল এসব গ্রহের সৃষ্টি হয় তখন গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষের ফলেই গ্রহগুলো আকারে বড় হয়েছে। আজকে যে পৃথিবী গ্রহটি এত বড় হয়েছে এর কারণ বিভিন্ন গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষ।
এমনকি ধারণা করা হয় যে পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের সৃষ্টি হয়েছিল মঙ্গলের মতো একটি বস্তুর সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষের ফলেই। পৃথিবী ভেঙে তার টুকরো দিয়েই চাঁদের জন্ম হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর সঙ্গে এসব গ্রহাণুর সংঘর্ষের সম্ভাবনা কতোখানি সেটা বলা খুব কঠিন। তবে এধরনের ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে।
নাসার মহাকাশ বিজ্ঞানী অমিতাভ ঘোষ বলেন, মঙ্গল আর বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যে কয়েক কোটি গ্রহাণু ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। তাই কোনো গ্রহের সঙ্গে কোনো একটি গ্রহাণুর সংঘর্ষ অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। আর এতে ধ্বংস হতে পারে গ্রহটি। সেটা আগেও ঘটেছে।
যে পাঁচটি গ্রহাণু অতিক্রম করবে পৃথিবী
ডিসেম্বরের ১১ তারিখে ধ্বংসলীলা চালাতে সক্ষম একটি গ্রহাণু এসে পড়বে পৃথিবীর খুব কাছে। এটির নাম ৪৬৬০ নেরেসাস। এই গ্রহাণুটির আকার প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের থেকেও বেশি। এটি অন্য গ্রহাণুর থেকে ৯০ শতাংশ বড়।
এরপর ডিসেম্বরের ১৭ তারিখে ২০০৩ এসডি২২০ নামে একটি গ্রহাণু। এটি দুবাইয়ের বুর্জ খলিফার মতো বড়। ১৭ ডিসেম্বর পৃথিবীর কাছ দিয়ে পার করে যাওয়ার কথা এটির। এই গ্রহাণুর আকার মোট ৭৯১ মিটার।
ডিসেম্বরের ২৪ তারিখে ২০১৬ টিআর৫৪ নামে একটি ছোট গ্রহাণু পার করবে পৃথিবীকে। এটির ব্যস ১০০ থেকে ২৩০ মিটারের মধ্যে।
ডিসেম্বরের ২৭ তারিখে ২০১৮ এএইচ নামে একটি গ্রহাণু পার করবে পৃথিবীকে। এটিও আকারে ছোট। এটির ব্যস ৯০ মিটার থেকে ১৯০ মিটারের মধ্যে। এটি আরও একবার পৃথিবীর খুব কাছে চলে এসেছিল, যখন চাঁদের থেকেও এর দূরত্ব ছিল কম। কিন্তু এ বারে দূরত্ব অনেকটাই বেশি থাকবে।
ডিসেম্বরের ২৯ তারিখে একটি বিশাল আকারের গ্রহাণু আসবে পৃথিবীর কাছে। মাত্র ৩০ লক্ষ কিলোমিটার দূরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে এই গ্রহাণুটির। ফলে, সামান্য যদি গতিপথ পরিবর্তন হয়, তাহলে সমস্যা বাড়তে পারে।
গ্রহাণুর সাথে সংঘর্ষের পরিণতি কী হতে পারে?
কোনো একটি গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত করলে বা সেটি যদি গিয়ে কোনো একটি দেশের কোনো একটি শহরে গিয়ে পড়ে, তাহলে কী হবে? শুধু কি ওই শহরটিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে? নাকি গোটা পৃথিবী? আর এর সম্ভাবনাই বা কতোটা?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ক্ষতি নির্ভর করবে গ্রহাণুটি আকারে কতটা বড়ো তার উপর। যেমন সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে গ্রহাণুর সাথে সংঘর্ষের কারণে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। বিজ্ঞানীরা মনে করেন গ্রহাণুটি এত জোরে পড়েছিল যে এর ফলে বায়ুমণ্ডলে অনেক ধুলো ছড়িয়ে পড়ে। একারণে কয়েক বছর বা কয়েক মাসের জন্য সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারেনি। আর আমরা সবাই জানি প্রাণের বেঁচে থাকার জন্য সূর্যের আলো খুবই জরুরি।
তাই গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে সেটি হবে পারমাণবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী। কোনো একটি শহরে গ্রহাণু এসে পড়লে ধ্বংসযজ্ঞ শুধু ওই শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, পুরো গ্রহেই তার প্রভাব পড়বে। আর এটি ঘটাও খুব স্বাভাবিক। আগেও ঘটেছে। সামনে ঘটার সম্ভাবনাও তৈরি হবে।
সংঘর্ষের ফলে যদি কোথাও বড় ধরনের আগুন লেগে যায় বা একটা বিশাল গর্ত তৈরি হয় এবং যদি এর সব ধ্বংসাবশেষ বায়ুমণ্ডলে চলে যায়, তাহলে সারা গ্রহেই ধুলোবালি ছড়িয়ে পড়তে পারে। এরকম হলে পৃথিবীর প্রাণীরা হয়তো বেঁচে থাকতে পারবে না। এরকম ধূলিঝড় বা ডাস্ট স্টর্ম মঙ্গল গ্রহে দেখতে পাওয়া যায়। এর ফলে সেখানে সূর্যের আলো দেখা যায় না। নাসার পাঠানো রোভার এই ধূলিঝড় লক্ষ্য করেছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১২১০
আপনার মতামত জানানঃ