বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করায় ভারতের দুটি বিখ্যাত সংবাদমাধ্যমের অফিসে হানা দিয়েছে দেশটির কর কর্তৃপক্ষ। টেলিভিশন চ্যানেল ভারত সমাচার ও হিন্দি ভাষার পত্রিকা দৈনিক ভাস্করের একাধিক কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার এ অভিযান পরিচালিত হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
কর ফাঁকি ও আরও কিছু অনিয়মের অভিযোগে এ অভিযান চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন কর কর্মকর্তারা। তবে গণমাধ্যম দুটির সাংবাদিক, মিডিয়া পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ও বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতারা অভিযোগ করেছেন, করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা নিয়ে সাহসী সাংবাদিকতা করার কারণেই তাদের টার্গেট করেছে সরকার।
দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্রসহ ভারতজুড়ে দৈনিক ভাস্করের ৩০টি কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও মালিকদের বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়েছে এবং তাদের অনেকের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তারা বলছে, এটা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, হিন্দি ভাষার পত্রিকা দৈনিক ভাস্কর করোনা মহামারি শুরুর পর সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ঘাটতি নিয়ে খবর প্রকাশ করে আসছে। এর মধ্যে ছিল অক্সিজেন ও হাসপাতালের শয্যা ঘাটতিসহ অনেক খবর। একই ধরনের কাজ করেছিল টিভি চ্যানেল ভারত সমাচার। এ দুই প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গঙ্গায় বেশ কিছু মরদেহ ভাসছে। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত ব্যক্তিদের দেহ।
গত এপ্রিলে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপির) গুজরাট শাখার সভাপতি জিতু ভাঘানির মুঠোফোন নম্বর প্রকাশ করে দৈনিক ভাস্কর। সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপের তৈরি আড়িপাতার সফটওয়্যার পেগাসাস নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারা।
এ প্রসঙ্গে দৈনিক ভাস্করের সম্পাদক ওম গৌর ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের সাহসী সাংবাদিকতার কারণেই এই অভিযান। আমরা প্রতিবেদন করেছিলাম কীভাবে অক্সিজেনের অভাবে ও হাসপাতালের বিছানায় করোনা রোগী মারা যাচ্ছে।’
যত আমাদের গলা চেপে ধরবেন, তত জোরে আমরা সত্য বলবো’, টুইটারে বলেছে ভারত সমাচার।
২০১৭ সালে ভারতের কর কর্তৃপক্ষ সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি কার্যালয় এবং এর প্রতিষ্ঠাতাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংক্রান্ত তাদের সাম্প্রতিক র্যাংকিংয়ে ভারতকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪২ নম্বরে স্থান দিয়েছে।
মেক্সিকো ও মিয়ানমার এ তালিকায় ভারতের কাছাকাছিই অবস্থান করছে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার-এর তরফে মোদিরর বিষয়ে বলা হয়, ‘২০০১ সালে মোদি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এই রাজ্যকে খবর এবং তথ্য নিয়ন্ত্রণ করার ল্যাব হিসেবে ব্যবহার করে। এরপর ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তা দেশে প্রয়োগ করেন তিনি।’
আরও বলা হয়, ‘তার সবথেকে বড় অস্ত্র হল গণমাধ্যমে নিজের এমন ভাষণ দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া যাতে জাতীয়তাবাদী মনোভাব ছড়িয়ে যায়। খবর ছড়িয়ে দিয়ে বড় বড় শিল্পপতিদের সঙ্গে তিনি বন্ধুত্ব করেন, যাদের হাতে সংবামাধ্যম রয়েছে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪২৩
আপনার মতামত জানানঃ