করোনায় পর্যদুস্ত ভারত। আন্তর্জাতিক মহলেও ভারতের কোভিড পরিসংখ্যান নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ। অভিযোগ উঠেছে মৃত্যু কমিয়ে দেখানোর। এ বার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যানে বড় রকমের ফাঁকফোকর সামনে এলো। সুত্র: আনন্দবাজার।
তবে সেই প্রথম দেখেই নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে এসেছে নয়াদিল্লি। ভারতে কোভিডে মৃত্যু কমিয়ে দেখানো হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক মহল থেকেও একাধিকবার অভিযোগ সামনে এসেছে, যদিও তা উড়িয়ে দিচ্ছে মোদি সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ। মহামারিতে হিসাবের ‘সামান্য ভুল’ হয়ে থাকতে পারে বলে দাবি তাদের।
সূত্র মতে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় যখন ভারতে টালমাটাল অবস্থা, ওই সময় এপ্রিল ও মে মাসে এমন কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা নেই। সরকারি পরিসংখ্যানেই তাদের নামের পাশে মৃত্যুর কারণ হিসেবে কোথাও ‘জ্বর’ এবং কোথাও ‘অজ্ঞাত কারণ’ লেখা রয়েছে।
শুধু তাই নয়, শ্বাসকষ্ট এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাকে যখন করোনার উপসর্গ হিসেবে ধরা হচ্ছে, ওই সময় শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ নিয়েও বহু মানুষ মারা গিয়েছেন। কিন্তু তাদের করোনা পরীক্ষা হয়েছিল কী হয়নি, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই সরকারের কাছে।
শহরাঞ্চল ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৩ সালে জাতীয় স্বাস্থ্য প্রকল্প (ন্যাশনাল হেল্থ মিশন) শুরু করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ওই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হেলথ ম্যানেজমেন্ট ইনফর্মেশন সিস্টেম (এইচএমআইএস), যার মাধ্যমে প্রায় ২ লাখ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের যাবতীয় পরিষেবা এবং কাজকর্মের হিসেব রাখা হয়। আর তাতেই কেন্দ্রের কোভিড পরিসংখ্যান নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
কারণ এইচএমআইএস’র কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, মহামারির আগে ২০১৯ সালের মে মাসে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন ২০২১-এর মে মাসে তার চেয়ে প্রায় ৩ লাখ মানুষ বেশি মারা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী মে মাসে করোনায় মারা গিয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৭৭০ মানুষ। ওই একই মাসে অজ্ঞাত কারণে তার প্রায় আড়াই গুণ বেশি মানুষ মারা গিয়েছে।
ভারতের জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ওয়েবসাইটে মূলত গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে। তবে কিছু বেসরকারি ও শহরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তথ্যও রয়েছে সেখানে। অনেক ক্ষেত্রেই শহরাঞ্চলের মৃত্যুর নথি সময়ে জমা পড়ে না তাদের কাছে। সে ক্ষেত্রে মৃত্যুর শংসাপত্র মিলিয়ে আলাদা হিসেব করা হয়। কিন্তু করোনা হানা দেয়ার পর তাদের পরিসংখ্যানেই আকাশ পাতাল তফাত দেখা গিয়েছে।
করোনা হানা দেয়ার আগে ২০১৯ সালে প্রত্যেক মাসে দেশে গড়ে দুই থেকে দু’লক্ষ ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে জানিয়েছে তারা। কিন্তু ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে তা বেড়ে ৩ লাখ ১০ হাজারে পৌঁছয়। মে মাসে তা আরো বেড়ে হয় ৫ লাখ ১১ হাজারে। ২০২০ সালের মে মাসের তুলনায় যা ১৭৫ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালের মে মাসের তুলনায় বেশি প্রায় ১৫০ শতাংশ। শুধু তাই নয়, মে মাসে ৩ হাজারের বেশি সন্তানসম্ভবা মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে যা কি না ২০১৯ সালের মে মাসের তুলনায় ৮২ শতাংশ বেশি।
ওই তথ্যে ঘেঁটে আরো দেখা গেছে যে ২০২১ সালের মে মাসে ভারতে প্রায় ৪ লাখ ৯২ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজারের মৃত্যুর কারণই জানা যায়নি। মৃত্যু শংসাপত্রে তাদের নামের পাশে ‘অজ্ঞাত কারণে মৃত্যু’ লেখা রয়েছে। বাকিদের অধিকাংশের নামের পাশে মৃত্যুর কারণ লেখা রয়েছে জ্বর ও শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা। মৃতদের কারো করোনা পরীক্ষা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে কোনো তথ্য দেওয়া নেই। কিন্তু মে মাসে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যখন তুঙ্গে, তখন কেন বিস্তারিত তথ্য নেই তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
ছত্তীসগঢ়ের গ্রামীণ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা যোগেশ জৈন বলেন, ‘এই সমস্ত মৃত্যুকে কোভিডে মৃত্যু হিসাবেই ধরা উচিত। মে মাসে যখন করোনায় গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যাচ্ছিল, ওই সময় নিশ্চয়ই ম্যালেরিয়ায় এত লোকের মৃত্যু হয়নি।’
হিসাবের এই গরমিল নিয়ে কেন্দ্রের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘কোভিডে মৃত্যুর ক্ষেত্রে কেন্দ্র শুধু যাবতীয় তথ্য এক জায়গায় এনে তা প্রকাশ করে। যাবতীয় তথ্য আসে রাজ্য সরকারগুলির কাছ থেকে। ফলে সেই সব হিসাবে গণ্ডগোল থাকলে কেন্দ্রের প্রকাশিত হিসাবেও গরমিল থাকতে বাধ্য।’
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪৩৫
আপনার মতামত জানানঃ