আফগানিস্তানে বিপুলসংখ্যক অস্ত্রসহ ১৩০ তালিবান সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণ করেছে। আফগানিস্তানের জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের একজন মুখপাত্রের বরাতে এই খবর দিয়েছে চীনা সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া। তালেবানের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার বরাতে জানা যায়, আফগানিস্তানের পশ্চিমে হেরাত প্রদেশে নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে ১৩০ জন তালিবান সদস্য। তারা ৮৫টি একে-৪৭ রাইফেল, পাঁচটি অন্য বন্দুক ও পাঁচটি রকেট শেল জমা দেয়।
আফগান গোয়েন্দা সংস্থা ‘ন্যাশনাল ডিরেক্টরেট অফ সিকিউরিটি’র মুখপাত্র জিলানি ফরহাদ জানিয়েছেন যে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে বড়সড় সাফল্য। এর ফলে হেরাত প্রদেশে দ্রুত শান্তি ও স্থিতাবস্থা ফিরবে। এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও বিবৃতি জারি করেনি তালিবান।
বিশ্লেষকদের মতে, হেরাত-সহ আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটি প্রদেশে শক্তিবৃদ্ধি করছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট। তালিবানের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও ক্রমাগত বাড়ছে। আইএস জঙ্গিদের হামলায় তালিবানের বেশ কয়েকজন স্থানীয় কমান্ডারের মৃত্যু হয়েছে। ফলে দিশেহারা তালিবান সদস্যদের অনেকেই আত্মসমর্পণ করতে পারে। তবে তার মানে এই নয় যে সংগঠনটি দুর্বল হয়ে পড়েছে।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর দেশটিতে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। আফগানিস্তানের বহু জেলা ইতোমধ্যে তালিবানের দখলে চলে গেছে।
সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রদেশগুলোর রাজধানীর আশেপাশের জেলাগুলো দখল করে নিচ্ছে তালিবান। মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা প্রাদেশিক রাজধানীগুলো দখলে নেওয়ার চেষ্টা করবে।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশটিতে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। আফগানিস্তানের চার শতাধিক জেলার মধ্যে ইতোমধ্যে তালিবানের দখলে চলে গিয়েছে ৮০টিরও বেশি। আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে ধাপে ধাপে সরিয়ে নেওয়া হবে সমস্ত মার্কিন সেনা।
১ মে থেকেই আফগানিস্তানে পুরনো তৎপরতায় ফিরতে শুরু করেছে তালিবানরা। এর মধ্যেই দেশের বহু অঞ্চল চলে গিয়েছে তাদের দখলে। ওই সময় থেকে সেনা সরাতে শুরু করেছে আমেরিকা। সেনা সরতে শুরু করতেই তালিবানরা যে মূর্তি ধারণ করেছে, তা থেকে কাবুল দখল করার আশঙ্কা ক্রমেই জোরদার হতে শুরু করেছে।
তালিবান কবে কাবুল দখল করবে জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা
জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, আফগানিস্তানের চার শতাধিক জেলার মধ্যে তালিবান ইতোমধ্যে ৮০টির বেশি জেলা দখল করে নিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই সশস্ত্র গোষ্ঠীটির হাতে কোনো না কোনো এলাকা পতনের খবর আসছে।
এসব বিবেচনায় নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল ও বিশেষজ্ঞরা তালিবান কবে নাগাদ রাজধানী কাবুল দখল করতে পারে সেই হিসাব কষছে।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বাহিনীর বরাতে জানিয়েছে, বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে তালিবান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করতে পারে। আর রাজধানী দখল করা মানে পুরো আফগানিস্তান দখল করা।
আফগানিস্তানের বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, আফগান সরকারের অযোগ্য নেতৃত্ব, দুর্নীতি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে নৃগোষ্ঠীগত বিভাজন তালিবানকে সুযোগ করে দিচ্ছে। তালিবানের ক্ষমতা দখল নির্ভর করছে আশরাফ গনি সরকারের টিকে থাকার ওপর।
আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের মধ্যে তালিবানের প্রবল আক্রমণের মুখে আফগান সরকার, সেনাবাহিনী এবং দেশটির বাসিন্দারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ধীরে ধীরে সৈন্য প্রত্যাহার প্রত্যাশা করছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব জেন সাকি জানান, আফগানিস্তান থেকে পেন্টাগন সুশৃঙ্খলভাবে সেনা প্রত্যাহারের বিষয় ভাবছে। দেশটিতে তালিবানের সহিংসতা তাদের সেনাদের ওপর নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এর অর্থ আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার বন্ধ ঘোষণার কোনো সম্ভাবনা নেই।
৫০ হাজার আফগানকে সরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
এদিকে গত ২০ বছর ধরে মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য কাজ করেছেন, এমন হাজার হাজার আফগানকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
প্রতিবেদনে এ বলা হয়, এক অনলাইন প্রতিবেদন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনায় মার্কিন সেনাদের বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত ৫০ হাজার আফগান নাগরিককে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে। এসব আফগান যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে অবস্থান করছে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জানা যায়, যেসব আফগান দোভাষী যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে কাজ করেছেন তারা বর্তমানে তালিবানের প্রতিশোধের শঙ্কায় ভুগছেন। মার্কিন সেনারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাহায্য নিয়েই অভিযান পরিচালনা করেছে। তাই সেসব আফগানদের রক্ষা করতেই ওয়াশিংটন এমন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
ইতোমধ্যে ১৮ হাজার আফগান যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে আবেদন করেছেন। তবে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ হওয়ায় বিলম্ব ঘটছে। আগামী সেপ্টেম্বরের আগে তাদের অন্যান্য দেশে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে তাদের আবেদনগুলো নিরাপদে চূড়ান্ত করা যেতে পারে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪) হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘যারা আমাদের সহায়তা করেছেন তাদের একা ছেড়ে আসা হবে না। অন্য অনেকের মতো তারাও জীবন বাজি রেখে আমাদের সাহায্য করেছেন। আমরাও তাদেরকে এখানে স্বাগত জানাই।’
এদিকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের আগে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে বাইডেন ও তার মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তারা আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা করবেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১০০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ