চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষের পেছনে শ্রমিকদের বেতন-অব্যবস্থাপনাসহ চীনা শ্রমিকদের নানা রকম অত্যাচারের কারণ পেয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। শ্রমিকদের সঠিক সময়ে বেতন না দেওয়া, রমজানে ইফতার-সেহরীর সময় না দেওয়া ও শ্রমিকদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসে বাধ্য করার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
বাঁশখালীতে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের ওপর পুলিশের গুলির ঘটনায় গঠিত দুইটি তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
রিপোর্টগুলো গত সপ্তাহে জমা দেয়া হলেও বিষয়টি আজ শনিবার(২২ মে) সংবাদ মাধ্যমকে জানায় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশের পক্ষ থেকে গঠিত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) জাকির হোসেন খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের ডিআইজি আনোয়ার হোসেনের কাছে বুধবার তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট যাবে পুলিশ সদর দপ্তরে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার কারণ হিসেবে আমরা স্থানীয়দের ইন্ধনের বিষয়টি ফোকাস করেছি। ঠিক সময়ে বেতন না পাওয়া, থাকা-খাওয়ার অসুবিধা, রমজানে ইফতার-সেহেরির সময় চেয়ে না পাওয়া, চীনা কর্তৃক শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের কারণে শ্রমিক অসন্তোষ ছিল বলে আমরা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি।’
ভবিষ্যতে এমন ঘটনা বন্ধ করতে রিপোর্টে ৯টি সুপ্রিম (প্রধান) সুপারিশ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের আলাদা দুটি তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিল্প গ্রুপ এস আলমের মালিকানায় নির্মাণাধীন এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করে, যাদের অনেকেই সঠিক সময়ে বেতন পায় না। এমনকি মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত শ্রমিদের বেতন না পাওয়ার প্রমাণ পেয়েছে কমিটি। এছাড়া রমজান মাসে রোজা পালনকারী শ্রমিকদের ইফতার-সেহরী ও নামাজের সময় দেওয়া হতো না। শ্রমিকদের আবাসন ব্যবস্থা ছিল অব্যবস্থাপনায় ভরা।
গত ১৭ এপ্রিল বাঁশখালীতে এস আলমের নির্মাণাধীন এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে শ্রমিক বিক্ষোভে গুলি চালায় পুলিশ। এতে ৭ শ্রমিক নিহত হন। অন্তত ৫০ জন শ্রমিক গুরুতর আহত হন।
ঘটনা তদন্তে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দুইটি তদন্ত কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও এক মাসের বেশি সময় পর তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিল।
অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক জাকির হোসেন খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১০ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করার দাবি, আমরা জেনেছি অনেক সময় বেতন পেতে শ্রমিকদের ১৮ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। এছাড়া তাদের থাকার যে ব্যবস্থা ছিলো তা নিয়েও তাদের আপত্তি ছিল। সেখানে টয়লেটের সমস্যা, পানি সাপ্লাই ও খাওয়ার পানির সমস্যা ছিল।’
চীনা শ্রমিকেরা বাংলাদেশি শ্রমিকদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করতো জানিয়ে জাকির হোসেন বলেন, ‘শ্রমিকদের অন্যতম অভিযোগ হলো, কাজের সময় চাইনিজ যারা ওরা খারাপ ব্যবহার করে। রোজার শুরুতে নতুন অভিযোগ ওঠে, শ্রমিকরা ইফতার করতে গেলে বা নামাজ করতে যেতে চাইলে চীনারা ছুটি দিতে চাইতো না। এ সময়গুলোতে বাংলাদেশি মুসলিম শ্রমিকরা অনুপস্থিত থাকলে চীনারা বাংলাদেশি শ্রমিকদের থেকে কর্মঘন্টা কেটে নিত।’
পুলিশ কেন গুলি চালিয়েছে জানতে চাইলে অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক জাকির হোসেন খান বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশের সংখ্যা ছিল ১২ থেকে ১৩ জন। শুরুতে পুলিশ শ্রমিকদের বোঝাতে চেষ্টা করে। সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ প্রথমে পিছিয়ে আসে। কিন্তু দেশি শ্রমিকরা যখন চীনা শ্রমিকদের হামলা করার চেষ্টা করে তখন পুলিশ শটগানের গুলি চালায়। এ সময় গুলি না করলে চীনাদের জীবনহানির আশঙ্কা ছিল। মামলার তদন্তে বিষয়টি আরও পরিস্কার হবে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ‘বাঁশখালীতে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনায় গঠিত পৃথক তদন্ত দুটি কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের রিপোর্টটি আমরা ক্যাবিনেটে পাঠিয়েছি। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে রিপোর্টের কাজ শেষ হয়েছে।’ তবে জেলা প্রশাসক এসব তদন্ত প্রতিবেদনকে ‘কনফিডেন্সিয়াল’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানাতে অস্বীকৃতি জানান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯২০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ