ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় শামীম নামে এক রিকশাচালকের কাছ থেকে সারারাতের আয় ৬০০ টাকাসহ তার পকেটে থাকা আরও ১০০ টাকা নেওয়ার অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শনিবার (৮ মে) পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
একদিনের রোজগারের টাকা নিয়ে যাওয়ায় পরদিন না খেয়েই রোজা রাখতে হয় শামীম নামের ভুক্তভোগী ওই রিকশাচালককে। বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সচেতন এক নাগরিক একটি বার্তা পাঠান। বার্তায় উল্লেখ করা হয়, এক অটোরিকশাচালকের সারারাতের আয় ৬০০ টাকা নিয়ে নিয়েছে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য।
অভিযোগটি গুরুতর হওয়ায় মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং তাৎক্ষণিকভাবে বার্তাটি সংশ্লিষ্ট ইউনিট কমান্ডারের কাছে পাঠিয়ে অভিযুক্তদের দ্রুত শনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে। এরপর অভিযুক্ত তিন সদস্যকে তাৎক্ষণিক এক অফিস আদেশে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদেরকে হাইওয়ে পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়ে হাইওয়ে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
মো. সোহেল রানা বলেন, গঠিত তদন্ত কমিটি এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট রিকশাচালককে খুঁজে বের করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাকে সব ধরনের সহযোগিতা ও সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সব সাক্ষ্য প্রমাণ, তথ্য উপাত্ত এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি বিবেচনায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্ত সদস্যদের বিরুদ্ধে বিধান অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (৪ মে) সিডস্টোর থেকে দুইজন পুলিশ সদস্যকে নিয়ে ভালুকা মডেল থানার সামনে নামিয়ে দিয়ে বাসট্যান্ড এলাকায় গেলে হাইওয়ে পুলিশের একটি টিম রিকশাচালক শামীমকে আটকায়। মহাসড়কে ওঠার কারণে ঐ তিন পুলিশ সদস্য শামীমের রিকশা নিয়ে নিতে চান। তারপর অনেক কাকুতিমিনতি করার পর এক হাজার টাকা চান পুলিশ সদস্যরা। পরে ওই রাতে শামীমের আয়ের ৬০০ টাকা ও পকেটে থাকা ১০০ টাকা দিলে তারা তাকে ছাড়ে। ওই রাতে খালি হাতে বাসায় ফেরের শামীম।
ঘটনার পরদিন বুধবার শামীম আবারও রিকশা নিয়ে সিডস্টোর বাসট্যান্ডে যান। সেখানে দাঁড়িয়ে ভালুকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে রিকশায় গন্তব্যে যাবেন কি না জিজ্ঞেস করেন শামীম। তখন উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানায় তার গাড়ি পথে। পরে শামীমের রিকশা চালিয়ে আয় কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি মঙ্গলবারের ঘটনাটি খুলে বলেন। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। এরপরই বিষয়টি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, পুলিশের মতো একটি বড় বাহিনীতে নানা ধরনের ও মানসিকতার লোক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সেখানে কেউ কেউ দুর্নীতি ও অপকর্ম করবে বা করার চেষ্টা করবে, তা-ও স্বাভাবিক। তারা বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা সাধারণভাবে খুবই হতাশার। পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে প্রায় সব ক্ষেত্রেই পুলিশ প্রশাসন যে অবস্থানটি নেয়, তা হচ্ছে অস্বীকারের নীতি।
পুলিশের কেউ অপকর্ম করেছে, এটা স্বীকার করে নেওয়া হলে বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে—এমন মানসিকতাই সম্ভবত এ ক্ষেত্রে কাজ করে। কিন্তু এই মানসিকতা খুবই বিপজ্জনক এবং এটা বরং পুলিশের ভাবমূর্তিকে আরও খারাপের দিকেই নিচ্ছে। এটা মোকাবিলার পথ হচ্ছে শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে সদস্যদের বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া, যথাযথ তদন্ত করা এবং কেউ কোনো ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়লে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৬৩৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ