‘আমি স্বেচ্ছাসেবক, কীভাবে সাহায্য করতে পারি?’ এই প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কমলা জ্যাকেট গায়ে মুনমুন।
হাসপাতাল প্রাঙ্গণে উপস্থিত সবাই করোনা রোগীদের কাছ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন তৃতীয় লিঙ্গের কিছু স্বেচ্ছাসেবীরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটের সামনে কোন অ্যাম্বুলেন্স থামতেই হাতে প্লাকার্ড নিয়ে ছুটে আসে তিন চারজন মানুষ। কমলা রঙের জ্যাকেট পরা। তারা ধরাধরি করে রোগীকে এম্বুল্যান্স থেকে নামায়। কেউ হাতে তুলে নেয় রোগীর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
কেউ আবার রোগীকে স্ট্রেচারে বসিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায় হাসপাতালের ভেতরে। দেখে মনে হলো, তারা বুঝি রোগীরই স্বজন।
এই সাহায্যকারীরা রূপান্তরকামী (হিজরা সম্প্রদায়) মানুষ।
সূত্র মতে, তারা তিনজনই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বৃহন্নলা’র স্বেচ্ছাসেবক মুনমুন, রুহী ও চাঁদনী। তাদের সঙ্গে আছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাদিকুল ইসলামও।
হাসপাতালে যারাই আসছেন চিকিৎসাসেবা নিতে, তাদের সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে দিন নেই, রাত নেই, অবিরাম কাজ করে চলেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বৃহন্নলা’র আরও ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক। এদের মধ্যে আটজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ।
তবে করোনা আক্রান্তদের সেবায় ‘বৃহন্নলা’র ব্যানারে ট্রান্সজেন্ডাররা যে এগিয়ে এসেছেন, সেটা অনেকেরই অজানা। সাধারণ মানুষ যেন সেটা জানতে পারে সেজন্য করোনা ইউনিটের সামনে তাদের একেকজন একেক দিন দাঁড়িয়ে থাকেন।
যখনই কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা হাসপাতালের সামনে এসে দাঁড়ায়, সঙ্গে সঙ্গে সাদিকুলসহ তৃতীয় লিঙ্গের মুনমুন, রুহী ও চাঁদনী সহযোগিতার জন্য এগিয়ে যান।
সংগঠনটির সভাপতি সাদিকুল ইসলাম জানান, করোনা আক্রান্ত হলেও সংকটাপন্ন অবস্থা না হলে কেউ আসেন না। এখানে কোনো অ্যাম্বুলেস এলে সবাই করোনা রোগী ভেবে নিজেদের সুরক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেন। বৃহন্নলার সদস্যরা সেসব মাথায় রেখেই মানবতার সেবা করছেন।
তিনি জানান, করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে মৃতদের হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরেও সহযোগিতা করছেন তারা।
ট্রান্সজেন্ডার মুনমুন আক্তার বলেন, ‘এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতেই আমরা কাজটি বেছে নিয়েছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা মহাখালীর সবচেয়ে বড় করোনা হাসপাতালেও সেবা দেওয়া শুরু করবে।’
মুনমুন জানালেন, সেবা দেওয়ার পাশাপাশি করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখতে নিয়মিত মাস্ক পরে থাকেন তারা। হ্যান্ডগ্লাভস, মাথায় সার্জিক্যাল টুপি আর পিপিই ব্যবহার করেন। একজন রোগীকে সেবা দেওয়ার পর দ্রুত তারা নিজেদের জীবাণুমুক্ত করে নেন।
এদিকে, অসহায় মানুষদের সেবায় বৃহন্নলার রয়েছে একটি তিন চাকার গাড়ি। তাদের জানালেই সেই সিএনজি দিয়ে রোগী ও তার স্বজনের যাতায়াতও নিশ্চিত করছে সংগঠনটি। গতকাল দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর তিনটি স্থান পোস্তগোলা, রায় সাহেব বাজার ও ঝিগাতলায় রোগী পৌঁছে দেন তারা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭৫০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ