চুয়াডাঙ্গায় এক সংসদ সদস্যের পক্ষে দায়ের করা ডিজিটাল আইনের মামলায় তিন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, চুয়াডাঙ্গার পৌরসভার দৌলতদিয়াড় ফায়ার সার্ভিস পাড়ার ইখতিয়ার উদ্দিনের ছেলে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ (৩২), বাগানপাড়ার আবু বক্করের ছেলে ও ৫নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি তাওরাত (২৬) এবং পোস্ট অফিসপাড়ার মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে ও ৩নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দিশান (২৪)।
পুলিশ জানায়, রাতে শহরের শহীদ হাসান চত্বরে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার তিনজন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটূক্তির ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।
ওসি আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট চুয়াডাঙ্গা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে “অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ওয়ার্কশপ” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন। সেখানে তিনি ১৬ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি বক্তব্য রাখেন। কিন্তু ওই বক্তব্য ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পাদনা করে ৩০ সেকেন্ডের একটি অসত্য ও বিকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা হয় ওই বছরের ১৯ আগস্ট।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই দিনই জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাহাবুল হোসেন বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন চুয়াডাঙ্গা সদর পুলিশ স্টেশনে। ওই মামলায় ছয় জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়।’
তদন্ত শেষে পুলিশ ওই দিনই চার্জশিট দাখিল করে চুয়াডাঙ্গা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। পরদিন ২০ আগস্ট শুনানি শেষে একই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেন।
তথ্য প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা বলেন, বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ হিসেবে গণ্য মামলাগুলোর শতকরা ৮০ ভাগ ফেসবুকে লেখা অথবা কিছু শেয়ার করা সংক্রান্ত অথবা কোনো ছবি আপলোড করা সম্পর্কিত। তিনি বলেন, এমন অপরাধের বিচারের জন্য আমাদের দরকার সোশাল মিডিয়া ল্যাব, যার মাধ্যমে অপরাধগুলো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা যাবে। কিন্তু আমাদের সোশাল মিডিয়া ল্যাব নেই।
অনেক ক্ষেত্রেই সাইবার মামলার বিচারের সাক্ষ্য হিসাবে স্ক্রিনশট আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এর ভিত্তিতেই বিচার সম্পন্ন করা হয়, জানিয়ে তিনি বলেন, স্ক্রিনশট সম্পাদনা করে পরিবর্তন করা যায়। সুতরাং, এই বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। ফলে তার মতে, “দেশে সাইবার মামলাগুলো সঠিকভাবে বিচারের ব্যাপারে সরকারকে ভাবতে হবে।
ডিজিটাল ও সাইবার অপরাধ তুলনামূলক “নতুন ধরনের অপরাধ,” হওয়ার কারণে এসব তদন্ত করতে এবং কোনটি অপরাধ কোনটি নয় তা চিহ্নিত করতে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ দরকার, বলে মনে করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক একেএম শহিদুল হক। উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ থেকে প্রশিক্ষক আনা হচ্ছে। আবার আমাদের পুলিশ কর্মকর্তাদের বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। তবে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সময় প্রয়োজন।
সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আদালতে সাইবার অপরাধ প্রমাণ করার জন্য আলামত ও প্রমাণ বের করা খুব বড়ো চ্যালেঞ্জ। কারণ সাইবার অপরাধের আলামতগুলো সব সময় থাকে না অথবা কিছুক্ষণ পর মুছে যায়। তার মতে, সারা পৃথিবীতেই আদালতে সাইবার অপরাধের সাজা কম হয়। আমাদের দেশেও কম হয়। তাছাড়া বাংলাদেশে সাইবার অপরাধে “সাজা না হলেও মামলা হওয়ার পর যে হয়রানি যায় তা সাজার চেয়ে কম নয়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮২১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ