কালকিনি পৌরসভা নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী মশিউর রহমান সবুজকে শনিবার দুপুরে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার ডেকে নেন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ হন। এই ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় সবুজের সমর্থকরা সবুজের মুক্তি দাবিতে থানা ঘেরাও করে। অবশেষে নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ১১ ঘণ্টা পর ফিরে আসেন মাদারীপুরের কালকিনি পৗরসভা নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মসিউর রহমান সবুজ। ফিরেই তিনি দাবি করেন, পুলিশ সুপারের (এসপি) গাড়িতে উঠিয়ে তাকে ঢাকায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ রোববার(০৭ ফেব্রুয়ারি) এলাকায় ফিরে তিনি এমন কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এসপি আমাকে তার গাড়িতে উঠিয়ে ধানমন্ডি আওয়ামী লীগের অফিসে নিয়ে যান। সেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরর সঙ্গে কথা হয়। তিনি আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করার আহবান জানান।’
মসিউর রহমান সবুজ দাবি করে বলেন, গতকাল (শনিবার) বিকেলে হঠাৎ এসপি আমাকে কল করে দেখা করতে বলেন। তিনি থানার ওসিকে আমার কাছে পাঠান। তখন আমি ওসির কাছে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলার বিষয় নিয়ে এসপি আমার সঙ্গে কথা বলবেন। পরে আমি সরল মনে তার গাড়িতে ওঠে এসপি অফিসে যাই। সেখানে যাওয়ার পর এসপি আমাকে তার গাড়িতে উঠিয়ে ঢাকার ধানমন্ডি আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে নিয়ে যান। তখন রাত প্রায় ৮টা বাজে। সেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরর সঙ্গে কথা হয়। তিনি আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করা আহবান জানান।
পরে আমি বলি, আমি দলের কোনো পদে নাই। আমি তার কাছে কালকিনির বাস্তবতা তুলে ধরি। পরে ওবায়দুল কাদের আমাকে বলেন, ‘তুমি আমার কথা শুনলে তোমাকে দলের ভালো অবস্থানে রাখা হবে।’ আমি তাকে বলি, এলাকায় গিয়ে আমি কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে জানাব।
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে সবুজ বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। আমি কালকিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলাম। আমি দলের কাছে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নও চাইনি। আমি জনগণের হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছি। তাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুরোধে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব না। আমি নির্বাচন করব এবং শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব।’
সবুজ বলেন, ‘এসপি আমাকে এভাবে গাড়িতে তুলে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে ঠিক করেনি। তিনি সবকিছু সত্য বলে আমাকে ঢাকায় নিতে পারতেন। তাহলে আর এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটত না। এসপি আমাকে ঢাকায় ওবায়দুল কাদেরের কাছে ছেড়ে চলে যান। আমি দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা শেষ করে আমার এলাকার এক বড় ভাইয়ের গাড়িতে ঢাকা থেকে কালকিনি আসি।’
আজ রোববার সকাল ১০টায় জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান মুঠোফোনে জাতীয় এক দৈনিকের কাছে দাবি করেন, ‘সবুজ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কাজে আমার অফিসে আসেন। পরে তিনি ঢাকায় যান তাঁর ব্যক্তিগত কাজে। আমরা তাঁকে ঢাকায় যাওয়ার সময় সহযোগিতা করেছি। তবে সবুজ এলাকা থেকে নিখোঁজ—এই ব্যাপারটা ধরে প্রথমে তার সমর্থকেরা থানার সামনে বিক্ষোভ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার পুলিশের গাড়িতে ওঠার পর সবুজ নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। এর জের ধরে তাঁর সমর্থকেরা গতকাল সন্ধ্যা থেকে থানার সামনে অবস্থান নেন। পরে বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ সমর্থকেরা। একপর্যায়ে নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে সবুজের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। টানা তিন ঘণ্টার সংঘর্ষে উভয় পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হন। এ সময় দুই পক্ষের লোকজনের হাতে লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র দেখা যায়। সংঘর্ষের সময় ককটেল বিস্ফারণ ও গুলির শব্দও শোনা গেছে। সংঘর্ষে সময় শতাধিক দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন কমপক্ষে ৬০ জন। সংঘর্ষে গুরুতর আহত একজনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭২৮
আপনার মতামত জানানঃ