ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর নৃশংস হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১০৯ জন নিহত হয়েছেন। এতে ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া এ হামলায় মোট মৃতের সংখ্যা ৫৩ হাজার ১১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।শুক্রবার (১৬ মে) তুর্কী বার্তাসংস্থা আনাদোলু অ্যাজেন্সি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
গাজার মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ছিটমহলে ইসরাইলি হামলায় ১০৯ জন নিহত হয়েছেন এবং আরো ২১৬ জন আহত হয়েছেন। এর মাধ্যমে ইসরাইলি আক্রমণে আহতের সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার ২১৪ জনে দাঁড়িয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘অনেক ভুক্তভোগী এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে ও রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।’
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে ইসরাইল অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। কিন্তু যুদ্ধবিরতির দুই মাসের মধ্যেই ইসরাইল আবারো ব্যাপকহারে সামরিক অভিযান চালানো শুরু করে। গত ১৮ মার্চ ভোরে শুরু হওয়া অভিযানে এখনো পর্যন্ত কমপক্ষে দুই হাজার ৮৭৬ জন নিহত এবং আট হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। এর আগে, ইসরাইল গত ২ মার্চ থেকে গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সেখানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
গাজা সরকারি মিডিয়া অফিসের মতে, মোট নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি। ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষকে নিহত বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।
গাজায় সামরিক অভিযান চালানোর জন্য গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। দেশটির অব্যাহত এ হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এজন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে।
জাতিসঙ্ঘের হিসাব মতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসাথে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিসরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)।
ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে।
আপনার মতামত জানানঃ