দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায় প্রায় ১ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন বা ১৯ দশমিক ৫ লাখ বছর আগে হোমিনিনরা বিচরণ করত। রোমানিয়ার ওল্ট নদী উপত্যকায় অবস্থিত গ্রাউনচেনু সাইটে আবিষ্কৃত ফসিলের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি ইউরোপে মানবজাতির উপস্থিতি সম্পর্কে পূর্বের ধারণাগুলোকে নতুনভাবে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করবে।
হোমিনিন হলো একটি জীব বৈজ্ঞানিক শ্রেণি, যা মানুষের সরাসরি পূর্বপুরুষ এবং তাদের কাছাকাছি সম্পর্কিত প্রজাতিগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে। এর মধ্যে মানব (হোমো) প্রজাতি, বনমানুষ (শিম্পাঞ্জি), গেরিলা, ওরাংআউটান এবং তাদের পূর্বপুরুষেরা অন্তর্ভুক্ত। সহজভাবে বললে, হোমিনিন এমন একটি প্রজাতি বা প্রজাতির গ্রুপ, যার মধ্যে মানুষের বিবর্তনের সমস্ত পূর্বপুরুষ ও নিকট আত্মীয় রয়েছে।
নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র অনুযায়ী, রোমানিয়ায় গ্রাউনচেনু সাইটের ৪ হাজার ৫০০টিরও বেশি পশুর হাড় পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষায় কিছু হাড়ের ওপর এমন চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা হোমিনিন দ্বারা পশু মাংস ছাড়ানোর প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। গবেষকেরা ২০টি হাড়ের ওপর সৃষ্ট চিহ্ন বিশ্লেষণ করে সাতটি হাড়ে কাটা চিহ্নের প্রমাণ পেয়েছেন। এসব চিহ্ন পশুর টিবিয়া ও ম্যান্ডিবল অঞ্চলে পাওয়া গেছে, যা হাড় থেকে মাংস সরানোর প্রক্রিয়া নির্দেশ করছে। এই আবিষ্কার প্রমাণ করে যে, প্রাচীন মানুষেরা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও ঋতুভিত্তিক পরিবেশে বসবাস করতে সক্ষম ছিল, যা আগে ধারণা করা হয়নি।
গ্রাউনচেনু সাইট থেকে পাওয়া দাঁতের নমুনাগুলোর ওপর একটি বিশেষ পরীক্ষা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে খুবই সঠিকভাবে এর বয়স নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। এই পরীক্ষায় ‘লেজার অ্যাবলেশন ইউ-পিবি ডেটিং’ নামক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।
এ পদ্ধতির সাহায্যে সাইটের হাড়ের পরিসীমা ২ দশমিক ০১ থেকে ১ দশমিক ৮৭ মিলিয়ন বছর নির্ধারণ করা হয়, যার গড় বয়স ১ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন বছর। এই আবিষ্কারটি পূর্বের বায়োক্রোনোলজিক্যাল অনুমানগুলোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং গ্রাউনচেনুকে ইউরোপে সর্বপ্রথম হোমিনিন কর্মকাণ্ডের প্রমাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। একটি ঘোড়ার দাঁতের আইসোটোপ বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, সেসময় রোমানিয়ার মাঝারি আর্দ্রতা এবং ঋতুভিত্তিক বৃষ্টিসহ মৃদু শীতকাল ছিল, যা হোমিনিনদের বসবাসের জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করেছিল।
গ্রাউনচেনু সাইট থেকে প্রাপ্ত প্রমাণ পূর্বের ধারণাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করছে। এর আগে ভাবা হতো—জর্জিয়ার ডমানিসি সাইটে প্রথম বসতি স্থাপন করেছিল হোমিনিনরা। তবে এই নতুন আবিষ্কার নির্দেশ করছে যে, প্রাচীন মানবরা অনেক আগে বিভিন্ন পরিবেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, যা তাদের পরিবেশগত অভিযোজন ক্ষমতার প্রমাণ দেয়। এখানে উষ্ণ পরিবেশে বাসকারী প্রাণী যেমন: প্যাঙ্গোলিন ও স্ট্রিচ-এর উপস্থিতি, এই অভিবাসনকে সমর্থন করে, যা তাদের আরও বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাকে ইঙ্গিত দেয়।
এটি প্রাচীন মানবসমাজ পরিবেশের সঙ্গে তার অভিযোজন ক্ষমতার মাধ্যমে ইউরোপে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম হয়েছিল।
আপনার মতামত জানানঃ