সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে বুধবার বাংলাদেশে সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
‘বাংলা ব্লকেড’ নামে এই কর্মসূচি পালনে সারা দেশের শিক্ষার্থীদেরকে আহবান জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলন থেকে। বুধবার সকাল ১০টা থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে সড়ক-মহাসড়কের গুরুত্ব পয়েন্ট অবরোধ করে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করার কথাও জানান আন্দোলনকারীরা।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “নিজ উদ্যোগে শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে নামেনি। এই ইস্যুতে সরকার নিশ্চুপ থাকার কারণে এই ধরনের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছে আন্দোলনকারীরা”।
কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের সমাবেশের কারনে রবি এবং সোমবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমনকি মহাসড়কেও ব্যাপক যানজট তৈরি হয়।
এপ্রসঙ্গে মি. ইসলাম বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষের ভোগান্তি করতে চাই না। এই ভোগান্তির দায় সরকারকে নিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে কোন আশ্বাস পায় নাই বলেই আমাদের এই আন্দোলন”।
কোটা বিরোধী আন্দোলন ঘিরে এই প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী অবরোধের কর্মসূচি দিলেন আন্দোলনকারীরা। ২০১৮ সালে কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করা হলেও সেটি ছিল মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আশেপাশের এলাকাজুড়ে। সে সময় দেশব্যাপী এধরণের কোন কর্মসূচি দেয়া হয়নি।
কোটা বাতিলে সরকারের পরিপত্র স্থগিত করে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গত ২রা জুলাই থেকে আন্দোলনে নামের শিক্ষার্থীরা। ৭ই জুলাই থেকে তারা বিভিন্ন সড়ক অবরোধের “বাংলা ব্লকেড” কর্মসূচি পালন করছেন। মঙ্গলবার তারা “বাংলা ব্লকেড” বন্ধ রেখে “গণসংযোগ” কর্মসূচি পালন করেন।
কর্মসূচি ঘোষণা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, বুধবার সকাল ১০টা থেকে সূর্যাস্ত সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদেশে এ কর্মসূচি চলবে। সড়কপথ ও রেলপথ বাংলা ব্লকেডের আওতাভুক্ত থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের এই আন্দোলন কোটা বাতিলের নয় বরং বাস্তবতার সাথে সমন্বয় করে যৌক্তিক সংস্কার।
সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি এই আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী নয়। বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের রিওয়ার্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলিনি।
তার দাবি, “শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন গণআন্দোলনে পরিণত হয়েছে। কৃষক, শ্রমিক, প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা সবাই সমর্থন জানিয়েছেন। আমরা নীতিনির্ধারক, বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, গণমাধ্যম সবার সাথে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি”।
মঙ্গলবার দুজন শিক্ষার্থী হাইকোর্টে আপিল প্রসঙ্গ টেনে এই সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়েছে যারা আপিল করেছে তারা এই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কেউ নয়।
সমন্বয়ক মি. ইসলাম বলেন, “আমাদের মূল দাবিটা মূলত নির্বাহী বিভাগের কাছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সাথেও সমন্বয় করেছি। আমাদের মাঠ পর্যায়ে জরিপ ও সর্বসম্মতিক্রমে ৫% কোটা রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ক্ষুদ্র -নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী কোটা থাকবে”।
সমন্বয়ক সারজিল আলম বলেন, “যদি নির্বাহী বিভাগ থেকে লিখিত ডকুমেন্ট বা পরিপত্র জারি করে যদি নিশ্চিত করা হয় যে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল গ্রেডে যৌক্তিক সংস্কার করা হবে তাহলে আমরা আনন্দ মিছিল করে রাজপথ ছেড়ে পড়ার টেবিলে ফিরে আসবো”।
কোটা বিরোধী চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু হলে বলা হয়েছিল, এটি অন্তর্বর্তীকালীন সিদ্ধান্ত। এত বছর পরেও মুক্তিযোদ্ধাদের তৃতীয় প্রজন্মের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা বহাল রাখার যৌক্তিকতা নেই।
২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটা-ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
কিন্তু তখন সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত।
পরে এ রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। কিন্তু গত ৯ জুন প্রাথমিক শুনানির পর আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানো হয়।
এ অবস্থায় কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত পহেলা জুলাই থেকে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা।
আপনার মতামত জানানঃ