এশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চল এখন তাপপ্রবাহের কবলে। কিছু অঞ্চলে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। চলমান অতি তাপমাত্রায় ফিলিপাইনের একটি বিশালাকার কৃত্রিম জলাধার শুকিয়ে যায়। তীব্র খরার মধ্যে প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো শহরের ধ্বংসাবশেষ বাসিন্দাদের নজরে আসে।
খবর পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা শহরটি দেখতে সেখানে ভিড় করছেন। এক সময়ের বিশাল অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষের ওপর উঠে অনেকে ছবি তুলে রাখছেন।
১৯৭০ সালে পানি সংরক্ষণের জন্য এটি তৈরির সময় পাশের ঐতিহ্যবাহী পান্তাবঙ্গন শহরটি তলিয়ে যায়। কিন্তু এবার অত্যন্ত শুষ্ক আবহাওয়া ও তীব্র তাপদাহের সময় সেখানকার পানি শুকিয়ে যেতে থাকে। এর পরই জলাধারের তলদেশ পর্যন্ত শুকিয়ে যায় এবং তখনই মানুষের নজরে আসে তিনশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই শহর।
দেশটির বাঁধ পরিচালনাকারী রাষ্ট্রীয় সংস্থার প্রকৌশলী মারলন প্যালাডিন বার্তা সংস্থা এএফপিকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে, দাবদাহ উপেক্ষা করে ঐতিহ্যবাহী শহরটি দেখতে সেখানে ভিড় করছেন অনেক দেশি-বিদেশি পর্যটক।
এশিয়ার এই দেশটির অর্ধেকের বেশি জায়গায় এখন তীব্র খরা দেখা গেছে। কয়েকটি শহরে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে ২৪ এপ্রিল চরম তাপদাহে দেশটির রাজধানী ম্যানিলাসহ ৩০টি শহরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। নাগরিকদের বাইরে সময় কাটানোর পরিমাণ সীমিত করতে সতর্কতা জারি করা হয়।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেশটির বাঁধ পরিচালনাকারী রাষ্ট্রীয় সংস্থার একজন প্রকৌশলী মারলন প্যালাডিন বলেন, ‘বাঁধটি নির্মাণের পর এবারই শহরের বেশ বড় অংশ পানির উপরে রয়েছে।’ সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে সেখানকার পানির স্তর স্বাভাবিক উচ্চ মাত্রা ২২১ মিটার থেকে প্রায় ৫০ মিটার কমেছে।
ইতিহাস বলছে, ১৬৪৫ সালে স্প্যানিশ মিশনের এক পুরোহিত পান্তাবঙ্গনে বসতি স্থাপন করেন। ধীরে ধীরে এটি গ্রামে পরিণত হয়। এরপর ১৭৪৭ সালে এলাকাটি আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিপাইনের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৯০০ সালে পান্তাবঙ্গন আনুষ্ঠানিকভাবে শহরের মর্যাদা পায়। এ শহরটি ঘিরে ফিলিপাইনের বাসিন্দারা আগ্রহ ও কৌতূহল রয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন শহরটির ধ্বংসাবশেষ যথাযথভাবে সংরক্ষণে দাবি জানিয়ে আসছে।
সাধারণত মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাস দ্বীপপুঞ্জের দেশটিতে সবচেয়ে উষ্ণ এবং শুষ্কতম। তবে এই বছর এল নিনোর প্রভাবে পরিস্থিতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ম্যানিলার দক্ষিণে ক্যাভিট প্রদেশের একটি সমুদ্রতীরবর্তী রিসোর্টে কাজ করেন ৬০ বছর বয়সী এরলিন তুমারন।
সেখানে মঙ্গলবার তাপমাত্রার সূচক ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ‘এটি এত গরম যে আপনি শ্বাস নিতে পারবেন না। এটা আশ্চর্যজনক হলেও স্বাভাবিক যে তীব্র দাবদাহে আমাদের সুইমিংপুলগুলো এখন পুরোপুরি খালি। আপনি আশা করবেন, মানুষ এসে সাঁতার কাটবে, কিন্তু মনে হচ্ছে তারা গরমের কারণে বাড়ির বাইরে যেতে চাইছেন না।’
গত সপ্তাহে অন্তত ৩০টি শহর ও পৌরসভায় তাপমাত্রার সূচক ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। এমনটি জানিয়েছেন রাজ্যের আবহাওয়া দফতর। তাপমাত্রার সূচক আর্দ্রতাকে বিবেচনায় নিয়ে তাপমাত্রা কেমন অনুভূত হয় তা পরিমাপ করে।
আপনার মতামত জানানঃ