যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য গাজা উপকূলে একটি অস্থায়ী বন্দর নির্মাণ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার স্টেট অব দা ইউনিয়ন ভাষণে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন।
ওই বন্দরের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের কাছে পাঠানো ত্রাণ সহায়তা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে এবং প্রতিদিন অতিরিক্ত কয়েকশ ট্রাকে করে এসব ত্রাণ পাঠানো সম্ভব হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে এর আওতায় গাজার মাটিতে কোন মার্কিন সেনা পাঠানো হবে না।
এদিকে জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে গাজার এক চতুর্থাংশ মানুষ এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন অস্থায়ী বন্দরটি নির্মাণ শেষ করতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। এ বন্দরে খাদ্য, পানি, ঔষধ ও অস্থায়ী আশ্রয় সামগ্রী নিয়ে বড় জাহাজ আসতে পারবে।
প্রাথমিকভাবে এসব জাহাজগুলো সাইপ্রাস হয়ে গাজায় যাবে। সাইপ্রাসেই ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সেগুলোর নিরাপত্তা তল্লাশি সম্পন্ন করবে।
গাজার পরিস্থিতিকে হৃদয় বিদারক উল্লেখ করেছেন তিনি। বলেছেন, “ কমপক্ষে ছয় সপ্তাহ স্থায়ী হবে দ্রুত এমন একটি যুদ্ধবিরতির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি”।
গত সাতই অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের ভূখণ্ডের ভেতরে ঢুকে বারশ মানুষকে হত্যা এবং আর ২৫৩জনকে জিম্মি করার পর থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় স্থল অভিযান ও বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ৮০০ এর বেশী মানুষ।
তবে এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে কারা কীভাবে গাজায় সেই ত্রাণসামগ্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। গাজায় কোন গভীর সমুদ্র বন্দর নেই। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র জরুরি ভিত্তিতে জাহাজ থেকে ত্রাণ সামগ্রী কীভাবে নেয়া হবে তার উপায় খুঁজছিলো।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সিবিএসকে বলেছেন ভার্জিনিয়া ভিত্তিক সপ্তম ট্রান্সপোর্টেশন ব্রিগেডতে দিয়ে পিয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। যদিও গাজার পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন প্রকাশ্যে এ বিষয়ে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করছে যে তারা দ্রুত এ কাজটি করতে চায়।
ওই ব্রিগেডটি এ ধরণের কাজ দ্রুত করার জন্যই তৈরি করা। তবে এখনো কোন সামরিক জাহাজ এ উদ্দেশ্যে গাজায় যেতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়েনি।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র নৌ বাহিনীর সিনিয়র কমান্ডার ভাইস এডমিরাল কেভিন ডোনেগান বিবিসি রেডি ফোরকে বলেছেন এ ধরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে তিনি বলেছেন স্থলপথে ত্রাণ নেয়াটাই এখন পর্যন্ত সেখানে সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
অবশ্য তিনি বন্দর থেকে ভূমিতে ত্রাণসামগ্রী নেয়ার কাজের নিরাপত্তার বিষয়েও সতর্ক করেছেন। এখন পর্যন্ত ত্রানবাহী কনভয়ের কাছে যাওয়ার পথে নিহত হয়েছে একশরও বেশি মানুষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছেন ত্রাণ কাজের গতি বাড়ানো উচিত দ্রুত কারণ উত্তর গাজায় না খেয়ে মরছে শিশুরা।
ত্রাণবাহী লরিগুলো এখন মিশর নিয়ন্ত্রিত রাফাহ ক্রসিং দিয়ে গাজায় প্রবেশ করছে। কিন্তু গাজার উত্তরে যেখানে ইসরায়েল স্থল অভিযান চালিয়েছে সেটি গত কয়েকমাস ধরে কার্যত বিচ্ছিন্ন।
গত বিশে ফেব্রুয়ারি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানায় যে লুটপাট, সহিংসতা ও নৈরাজ্যের কারণে তারা উত্তর গাজায় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও কয়েকটি দেশ বিমান থেকে খাদ্য ফেলার কথা বললেও ত্রাণসংস্থা গুলো বলছে এটি হতে পারে সর্বশেষ চিন্তা। তবে এর মাধ্যমেও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা সম্ভব হবে না।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র বিমান থেকে ত্রাণ সামগ্রী ফেলেছিলো। জাতিসংঘের একজন স্বাধীন বিশেষজ্ঞ বৃহস্পতিবার বলেছেন গাজায় ফিলিস্তিনিদের ‘খাবার না দেয়ার অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল’।
“গাজায় ক্ষুধার যে চিত্র তা অবিশ্বাস্য এবং আপনার কিছুই করছেন না,” জাতিসংঘের খাদ্য বিষয়ক বিশেষ দূত মাইকেল ফাখরি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে বলেছেন।
এদিকে হামাসের একটি দল কায়রোতে আলোচনা থেকে সরে গেছে। সেখানেও যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোন সমঝোতা হয়নি।
আশা করা হচ্ছিলো যে রমজান মাস আসন্ন থাকায় ৪০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। কিন্তু মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের চেষ্টা সত্ত্বেও সেটি হয়নি।
আপনার মতামত জানানঃ