যুক্তরাজ্যে নতুন প্রজাতির করোনাভাইরাসের তীব্র সংক্রমণ জনজীবনে ভীতিকর অবস্থা দেখা দিয়েছে। করোনা পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ চলে যাওয়ায় পর হাসপাতালগুলোতে উপচে পড়া ভীড় রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলছে। এমন পরিস্থিতিতে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে লন্ডনে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। করোনায় যুক্তরাজ্যে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ডও হয়েছে।
দেশটিতে গতকাল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৩২৫ জনের, যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ। এর আগেরদিন মৃতের সংখ্যা ছিল ১১৬২ জন এবং বুধবার ছিল ১০৪১ জন। গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার।
দেশটির করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় লন্ডনের মেয়র সাদিক খান ‘গুরুতর পরিস্থিতি’র ( মেজর ইনসিডেন্ট) ঘোষণা দেন, যা জরুরি অবস্থা জারির সামিল। এই সময়ে জনগণকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মেয়র সাদিক খান বলেন, ভাইরাসের বিস্তার ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ চলে যাওয়ায় লন্ডনের হাসপাতালগুলোর শয্যা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। ‘আমরা গুরুতর পরিস্থিতির ঘোষণা দিচ্ছি। কারণ, আমাদের শহরে হুমকি হয়ে ওঠা করোনাভাইরাসের প্রকোপ সংকটময় মুহূর্তে পৌঁছে গেছে।’
বড় ধরনের কোনও হামলা বা ভয়াবহ দূর্ঘটনা এবং বিশেষত যেসব ঘটনায় মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি, জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়া, মানবজীবন, মানবকল্যাণ, অপরিহার্য সেবা, পরিবেশ কিংবা জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ে সেসব ক্ষেত্রেই সচরাচর ‘মেজর ইনসিডেন্ট’ ঘোষণা করা হয় যুক্তরাজ্যে।
লন্ডনে এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালে সুউচ্চ গ্রেনফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সময় এমন গুরুতর পরিস্থিতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। ওই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল ৭২ জন। এবার করোনাভাইরাসের তাণ্ডবও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সাদিক খান জানান, লন্ডনের কিছু কিছু জায়গায় ২০ জনে একজন করে ভাইরাস সংক্রমিত হচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসেও বেড়ে গেছে চাপ। একদিনে আসা ৯ হাজার কল সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যুক্তরাজ্য এরই মধ্যেই ফাইজার/বায়োএনটেক, মর্ডানা এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা অনুমোদন করেছে।
ফাইজার/বায়োএনটেক এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে শুরু হয়েছিল টিকাদান কর্মসূচি। তৃতীয় টিকা হিসাবে দেশটি শুক্রবার মডার্নার টিকাও অনুমোদন করেছে। তারপরও করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না ইউরোপের এই দেশটি। বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হিসাবে পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাজ্য। সরকারি হিসাবে সেখানে কোভিড-১৯ এ মারা গেছে ৮০ হাজারের কাছাকাছি মানুষ।
আপনার মতামত জানানঃ