নীল সমু্দ্রের দিন হয়তো শেষ হয়ে আসছে। দিন দিন চেনা রং হারিয়ে ফেলছে দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি। সমুদ্রের রং বদলে যাচ্ছে নীল থেকে সবুজে। যার কারণ নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছেন না বিজ্ঞানীরাও।
দিগন্তবিস্তৃত নীল আকাশ আর গাঢ় নীল সমু্দ্রের হাতছানি। সাহিত্যের পাতায় এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা হামেশাই দেখা গিয়েছে। সমুদ্র নীল রঙেই যেন হয়ে ওঠে অপরূপা।
কিন্তু নীল সমু্দ্রের দিন হয়তো শেষ হয়ে আসছে। দিন দিন চেনা রং হারিয়ে ফেলছে দিগন্তবিস্তৃত জলরাশি। সমুদ্রের রং যাচ্ছে বদলে।
বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ, নীল থেকে দিন দিন সবুজ হয়ে উঠছে সমুদ্র। যার স্বপক্ষে যুক্তি হিসাবে খাড়া করা যায় পরিসংখ্যানও।
পরিসংখ্যান বলছে, গত দুই দশকে পৃথিবীর বুকে যত সমুদ্র আছে, তার ৫৬ শতাংশ জল নীল থেকে সবুজ হয়ে উঠেছে।
পৃথিবীতে মোট স্থলভাগের পরিমাণ ২৯.২ শতাংশ। সমুদ্রের সবুজ হয়ে ওঠা অংশের আয়তন মোট স্থলভাগের আয়তনের দ্বিগুণের কাছাকাছি।
কেন সমুদ্রের রং এ ভাবে দিন দিন বদলে যাচ্ছে, তার কারণ নিয়ে বিশেষজ্ঞেরা একমত হতে পারছেন না। তবে তাঁরা জানাচ্ছেন, রঙের বদল নিয়ে তেমন ভাবিত নন তাঁরা।
বিশেষজ্ঞদের ভাবাচ্ছে অন্য কথা। তাঁদের মতে, এই রং বদলে যাওয়ার অর্থ হল, সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র পরিবর্তিত হচ্ছে। যা খুব একটা ভাল লক্ষণ নয়।
সমুদ্রপৃষ্ঠে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হলে তার মাধ্যমে জলে ক্লোরোফিলের পরিমাণ নির্ণয় করেন বিজ্ঞানীরা। প্রতি বছর এই পরিমাণ সমান থাকে না। জলে ক্লোরোফিল কখনও বাড়ে কখনও কমে।
আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই সম্প্রতি সমুদ্রে ক্লোরোফিলের পরিমাণ বাড়তে শুরু করেছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে চার দশক পর্যবেক্ষণের পর।
বিজ্ঞানীরা অনেকে আবার আবহাওয়া পরিবর্তনের তত্ত্ব মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, স্রেফ আবহাওয়ার কারণে সমুদ্র উষ্ণ হওয়ায় সবুজের পরিমাণ বাড়েনি।
যুক্তি হিসাবে তাঁরা দেখিয়েছেন, পৃথিবীপৃষ্ঠে যে অঞ্চলে সমুদ্রের তাপমাত্রা বেশি, সেখানে সবুজের পরিমাণ কম— এমন একাধিক দৃষ্টান্ত রয়েছে।
সমুদ্রের এই রংবদল বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসকারী কোনও পরিবর্তন নয়। তবে এই সবুজ রঙে সমুদ্রের উপর মানবসভ্যতার নেতিবাচক প্রভাবের প্রতিফলন আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
সমুদ্রের রংবদল বেশি দেখা গিয়েছে পৃথিবীর ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় এলাকায়। এই অঞ্চলে শীত বা গ্রীষ্ম কোনওটাই অতি তীব্র হয় না। এখানে সমুদ্রের রংও তেমন বদলায় না। নতুন করে বদল তাই চোখে পড়েছে।
কেন সমুদ্রের রং বদল হচ্ছে, তার কারণ সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পারছেন না। নাসার তরফে এই পর্যবেক্ষণের জন্য ইতিমধ্যেই নতুন কৃত্রিম উপগ্রহের আয়োজন করা হয়েছে। ২০২৪ সালে যা কাজ শুরু করবে।
আপনার মতামত জানানঃ