অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম) ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান–সম্পর্কিত বিষয়বস্তুর ওপর সব পক্ষকে আগামী ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে এস আলম দম্পতির করা আবেদনের (লিভ টু আপিল) শুনানি নিয়ে আজ বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।
আদালত বলেছেন, সব পক্ষকে বিষয়বস্তু নিয়ে আগামী ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হলো। ৮ জানুয়ারি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হলো। সেদিন কার্যতালিকার ১০ নম্বর ক্রমিকের পরে বিষয়টি থাকবে।
এর আগে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে ‘এস আলম’স আলাদিন’স ল্যাম্প’ (এস আলমের আলাদিনের চেরাগ) শিরোনামে ৪ আগস্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি নজরে আনার পর শুনানি নিয়ে ৬ আগস্ট হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন।
অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডির) প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে এস আলম ও তাঁর স্ত্রী ২১ আগস্ট আপিল বিভাগে আবেদন করেন, যার ওপর আজ চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি, আহসানুল করিম ও মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ। দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানিতে অংশ নেন।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এস আলম গ্রুপ নিয়ে ওই প্রতিবেদনের অভিযোগ অনুসন্ধান–সম্পর্কিত বিষয়ে সব পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলেছেন চেম্বার আদালত। ফলে এস আলম গ্রুপ সম্পর্কিত বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থাকে অনুসন্ধান করতে যে আদেশ দেওয়া হয়েছিল, তা স্থগিত থাকবে।’
সম্প্রতি ইসলামি ব্যাংকের ঋণ কেলেংকারীতে সামনে উঠে এসেছে চট্টগ্রাম ভিত্তিক ব্যবসায়িক গ্রুপ এস আলমের নাম। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় এক লাখ কোটি টাকার ঋণ তুলে নিয়েছে তিনটি ব্যাংক থেকে, যার মধ্যে এক ইসলামি ব্যাংক থেকেই তুলে ন্যেয়া হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ। অথচ এর আগেও অনেক দিন ধরেই গ্রুপটি বিদেশে বিনিয়োগ করে আসছে, যা প্রচলিত আইনের খেলাপ।
এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন দুইজনই সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব ধারণ করেন। তারা এই নাগরিকত্ব দেখিয়েই তাদের বিদেশী ব্যবসা পরিচালনা করছেন। মূলত তারা তাদের ব্যবসা পরিচালনা করেন সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে।
State Watch
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
দেশের টাকা পাচার করে এস আলম গ্রুপের বিদেশে সম্পদের পাহাড়
জুলকারনাইন সায়ের (সামি)By জুলকারনাইন সায়ের (সামি)ডিসেম্বর ৩১, ২০২২No Comments5 Mins Read
সম্প্রতি ইসলামি ব্যাংকের ঋণ কেলেংকারীতে সামনে উঠে এসেছে চট্টগ্রাম ভিত্তিক ব্যবসায়িক গ্রুপ এস আলমের নাম। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় এক লাখ কোটি টাকার ঋণ তুলে নিয়েছে তিনটি ব্যাংক থেকে, যার মধ্যে এক ইসলামি ব্যাংক থেকেই তুলে ন্যেয়া হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ। অথচ এর আগেও অনেক দিন ধরেই গ্রুপটি বিদেশে বিনিয়োগ করে আসছে, যা প্রচলিত আইনের খেলাপ।
বিজ্ঞাপন
এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন দুইজনই সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব ধারণ করেন। তারা এই নাগরিকত্ব দেখিয়েই তাদের বিদেশী ব্যবসা পরিচালনা করছেন। মূলত তারা তাদের ব্যবসা পরিচালনা করেন সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে।
উপরের ছবিটি নেয়া হয়েছে কুয়ালালামপুর-ভিত্তিক কোম্পানি জাহারিন নেক্সক্যাপের ওয়েবসাইট থেকে, যেখানে দেখা যাচ্ছে ক্যানালি লজিস্টিকস সম্প্রতি কুয়ালামপুরের ফাইভ-স্টার রেনেসাঁ হোটেল ক্রয় করে। যে হোটেলের মার্কেট অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল স্টাডি করে দেয় জাহারিন নেক্সক্যাপ।
সিঙ্গাপুরের ডেটা রেজিস্টার ফর কোম্পানিজের ওয়েবসাইটে ক্যানালি লজিস্টিক্সের নাম সার্চ দিলে কোম্পানি এবং তার সিস্টার কনসার্নের নাম আসে।
প্রতিটা কনসার্নের নিচে এক বাক্যে যা লেখা আছে, এর চাইতে বিস্তারিত আর কোথাও পাওয়া যায়নি। এসকল প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, চকচকে ওয়েবসাইটে বেসিক সার্ভিস ছাড়া আর কোনো তথ্য তেমন নেই।
সাইপ্রাসের নাগরিক হিসাবে সিঙ্গাপুরে তালিকাভুক্ত
এরকম একটা বিশাল কোম্পানি যার কয়েকটি হোটেল রয়েছে, তাদের এমন ওয়েবসাইট থাকা অস্বাভাবিক।
২০১৩ সালে ক্যানালি লজিস্টিকসের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের আইবিস নভেনা হোটেল ক্রয় করে এস আলম গ্রুপ। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় কেপ্পেল ক্যাপিটালের মাধ্যমে। যারা বিক্রি করে ১২৫.৬ মিলিয়ন ডলারে, যা বাংলাদেশী টাকায় ১২৯০ কোটি টাকা। সিঙ্গাপুরের বিজনেস টাইমসে প্রথম এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
২০১৪ সালে ক্যানালি লজিস্টিকসের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের হোটেল গ্র্যান্ড চ্যান্সেলর ক্রয় করে হোটেল গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল লিমিটেডের কাছ থেকে। ২৫০ মিলিয়ন সিঙ্গাপুরিয়ান ডলারে সম্পন্ন হয় এই প্রক্রিয়া। যা বাংলাদেশী টাকায় ১৮৮০ কোটি টাকা। এই হোটেলের নেট প্রোফিট ২৮ কোটি টাকা, আর নেট অ্যাসেট ৯৪৮ কোটি টাকা।
ক্যানালি লজিস্টিক্সের নাম পালটানো হয় ২০১৬ সালের ১২ জুলাই। পরের নাম হয় ভেঞ্চুরা ইন্টারন্যাশনাল। এর রেজিস্ট্রেশন নাম্বার 201501028492 (1153816-X), ঠিকানা SUITE 6.01 LEVEL 6 WISMA PARADISE NO. 63 JALAN AMPANG, KUALA LUMPUR। আর ব্যবসায়িক ঠিকানা L11-1, 11TH FLOOR, MENARA SENTRAL VISTA, NO. 150, JALAN SULTAN ABDUL SAMAD BRICKFIELDS, KUALA LUMPUR। কোম্পানির মোট ৫০ লাখ শেয়ার, এর মাঝে সাইফুল আলমের শেয়ার ৩৫ লাখ আর তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের শেয়ার ১৫ লাখ।
এদিকে ক্যানালি শিপিং এর নাম পালটানো হয় ৫ ডিসেম্বর ২০২২ সালে। এর বর্তমান নাম উইলকিন্সন লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডার পিকক প্রোপার্টি হোল্ডিংস এবং নিউহ্যাভেন কর্পোরেট সার্ভিস। যা রেজিস্ট্রার করা ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে। যাদের শেল কোম্পানি নিয়ে ধারণা আছে, তারা এই তথ্যে এই কোম্পানি দুটোকে শেল কোম্পানি হিসেবে সন্দেহ করতে পারেন। পিকক প্রোপার্টি হোল্ডিংস উইলকিন্সনের ৩ কোটি সিঙ্গাপুরিয়ান ডলারের সমমূল্যের শেয়ারের পুরোটার মালিক। আর পিককের পেছনে আছে জার্সি ভিত্তিক আরেক শেল কোম্পানি সানতেরা। সিংগাপুরে উইলকিন্সনের ঠিকানা 80 raffles place UOB Plaza। ২০২০ সালে কোম্পানির মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৩ মিলিয়ন ডলার বা ৩৩৯.৫ কোটি টাকা।
২০১৬ সালে এস আলম গ্রুপ ভেঞ্চুরা ইন্টারন্যাশনালের নামে কুয়ালালামপুরের পাচ তারা হোটেল রেনেসাঁ কুয়ালালামপুর কিনে নেয়। এই হোটেলটি গত বিশ বছর ধরে পরিচালনা করে আসছিল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল, তারাই আগামী দশ বছরের জন্য হোটেলের দায়িত্ব নেয় আবার। এর জন্য এস আলম গ্রুপ ব্যয় করে ৭৬৫ মিলিয়ন রিঙ্গিট, যা বাংলাদেশী টাকায় ১৭৮৭.৬ কোটি টাকা।
২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ সিঙ্গাপুরের লিটল ইন্ডিয়ার সেরাঙ্গুন প্লাজায় অবস্থিত সেন্ট্রিয়াম স্কয়ার নামের একটি মার্কেট কিনে নেয়। যার জন্য পরিশোধ করে ১৩৫ মিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩৮৭ কোটি টাকা।
জাগোনিউজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এসএস পাওয়ার-১ লিমিটেডকে স্ট্যাম্প ডিউটি (কর) বাবদ ৩ হাজার ১৭০ কোটি ৮৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮০১ টাকা মওকুফ করেছে সরকার। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ৬১২ মেগাওয়াটের দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ল্যান্ড লিজ অ্যাগ্রিমেন্ট এবং ফাইনান্সিং ডকুমেন্টসের অন্তর্ভুক্ত দলিলাদি রেজিস্ট্রেশনের ওপর আরোপিত স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ এ টাকা মওকুফ করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ সুবিধা দেয়া হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্ট্যাম অ্যাক্ট, ১৮৯৯ এর সেকশন ৯ এর ক্লজ (এ)-তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার প্রাইভেট সেক্টর পাওয়ার জেনারেশন পলিসি অব বাংলাদেশের আওতায় বেসরকারি খাতে এসএস পাওয়ার-১ লিমিটেড কর্তৃক চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ৬১২ মেগাওয়াটের দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ল্যান্ড লিজ অ্যাগ্রিমেন্ট এবং ফাইনান্সিং ডকুমেন্টসের অন্তর্ভুক্ত দলিলাদি রেজিস্ট্রেশনের ওপর আরোপিত স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ ৩ হাজার ১৭০ কোটি ৮৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮০১ টাকা মওকুফ করা হলো।
এসডব্লিউএসএস১২০৫
আপনার মতামত জানানঃ