ভারত মহাসাগরে নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে এবার মিয়ানমারে গোপন ঘাঁটি বানাচ্ছে চীন। সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট ফুটেজে দেখা গেছে, মিয়ানমারের ছোট্ট দ্বীপ কোকো আইল্যান্ডে এই ঘাঁটি তৈরি করছে শি জিনপিংয়ের দেশ। এ নিয়ে নয়াদিল্লি উদ্বিগ্ন বলে খবর দিয়েছে খোদ ভারতীয় গণমাধ্যম।
খবরে বলা হয়েছে, ভারতীয় ইস্ট কোস্ট থেকে মিয়ানমারের দূরত্ব ১২০০ কিলোমিটারের মতো। কিন্তু আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ থেকে কোকো আইল্যান্ডের ব্যবধান মাত্র ৪২ থেকে ৫৫ কিলোমিটার। বিগত কয়েক মাস ধরে সেই কোকো আইল্যান্ডে সামরিক তৎপরতা চলছে। তৈরি হচ্ছে রাস্তা, বিমানঘাঁটি, এমনকি বানানো হচ্ছে রাডার স্টেশনও।
ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ম্যাক্সার টেকনোলজির উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে যে, কোকো দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করছে শি জিনপিংয়ের দেশ চীন।
কোকো আইল্যান্ডের অবস্থান একেবারেই ভারত নিয়ন্ত্রিত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কোলঘেঁষে। কোকো দ্বীপ বর্তমানে ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত দিক থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই দ্বীপগুলো তৈরি হয়েছে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরের মিলনস্থলে।
কোকো আইল্যান্ড মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন প্রশাসনিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। পাঁচটি দ্বীপ নিয়ে তৈরি এ অঞ্চল। এর মধ্যে চারটি দ্বীপ অবস্থিত গ্রেট কোকো রিফের ওপর। বহুদিন থেকে এই কোকো দ্বীপপুঞ্জে ঘাঁটি তৈরির চেষ্টায় ছিল চীন। এখান থেকে নজরদারি চালানো হয় আন্দামান ও নিকোবরের দিকে।
ভারতীয় বাহিনীর সামরিক কার্যকলাপে নজর রাখাই বেইজিংয়ের লক্ষ্য। ১৯৯৪ সালে এখানেই রাডার স্টেশন তৈরি করে নজরদারি শুরু করে চীন। শোনা গেছে, ওই বছরই কোকো দ্বীপপুঞ্জের পাঁচটি দ্বীপের মধ্যে দুটি চীনকে ইজারা দিয়েছে মিয়ানমার।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে- চীনের একটি পুরনো কৌশল হলো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ‘মিত্র’ দেশের রক্ষাকারীর ভূমিকা নিয়ে সেই দেশে পরিকাঠামো ও লগ্নি প্রসারের রাস্তা তৈরি করা। এর জলন্ত উদাহরণ পাকিস্তান। দেশটির গোয়াদর বন্দরে লগ্নি করে এবং চীন-পাক আর্থিক করিডোর গড়ে তুলে পশ্চিমে আরব সাগর পর্যন্ত নিজেদের বাণিজ্যপথ সম্প্রচারণ করতে চায় চীনা সরকার।
মিয়ানমারের ক্ষেত্রেও একই কৌশল নিয়েছে চীন। রোহিঙ্গা প্রশ্নে তারা পাশে দাঁড়িয়েছে মিয়ানমারের। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের আলোচনাতেও প্রভাব খাটাচ্ছে বেইজিং।
এক্ষেত্রেও নয়াদিল্লির লক্ষ্য হলো, মিয়ানমারে সড়ক ও রেলপথ গড়ে তুলে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বাণিজ্যপথের বিস্তার ঘটানো। আর সেটা করতে পারলে বিশ্বের বিশাল অংশজুড়ে চীনা সামরিক আধিপত্যও বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করতে পারলে বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় নৌবাহিনীর সামরিক কার্যকলাপের ওপরেও নজর রাখা সহজ হবে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, দক্ষিণ চীন সাগরের পাশাপাশি গোটা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দ্রুত আধিপত্য বিস্তারের পথে হাঁটতে চাইছে শি জিনপিং প্রশাসন। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উত্তরের ইস্ট দ্বীপ এবং ল্যান্ডফল দ্বীপের অদূরের কোকো দ্বীপে চীনা সেনাদের উপস্থিতি ভারতের নিরাপত্তার জন্য আশঙ্কাজনকই বটে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭১০
আপনার মতামত জানানঃ