সুবিধা করতে না পারলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংবাদ সংশ্লিষ্ট নয় এমন নানা অপরাধমূলক মামলাও দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷ এমনকি সন্ত্রাসী তৎপরতা, নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনের মামলাও দেয়া হচ্ছে, করা হচ্ছে গ্রেপ্তার৷ সেই সঙ্গে জিডিটাল আইনের খড়গ তো আছেই৷ এসব নিয়ে সাংবাদিকেরাও তেমন প্রতিবাদ করছেন না৷ তাই বাড়ছে নির্যাতনের মাত্রা।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র(আসক) তাদের প্রতিবেদনে বলেছে গত বছর (২০২২) সারদেশে ২২৬টি সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে৷ এর ৯০ ভাগেরও বেশি ঢাকার বাইরে জেলা ও উপজেলায়৷
আর এই নির্যাতন ও হুমকির ঘটনা বেশি ঘটিয়েছে পুলিশ, প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা৷ আর সরাসরি খবর প্রকাশের কারণে ওই খবরের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪১টি৷
আর্টিক্যাল ১৯-এর হিসেবে ওই সময় ৬১ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে৷ ছয়জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷ এইসব মামলায়ও পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা এগিয়ে৷
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ওমর ফারুক বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে পুলিশ ও প্রশাসন এখন সাংবাদিকদের চাপে রাখতে চায়৷ তাই তারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের মামলা করছে৷ যারা স্বাধীনভবে সত্য ঘটনা প্রকাশ করতে চায় এর মাধ্যমে তারা অন্য সাংবাদিকদের মেসেজ দিচ্ছে৷ একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে৷ এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে অন্তরায়৷
তিনি জানান, আমি শুনেছি স্থানীয় পর্যায়ে এইসব ঘটনায় সাংবাদিকেরা অনেক সময় প্রতিবাদও করেন না৷ এটা ভয়াবহ৷ এটা চলতে থাকলে নির্যাতন, মামলা, হুমকি আরো বেড়ে যাবে৷
তার মতে, সাংবাদিকতা এখন নানা কারণে তার আদর্শের জায়গা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে৷ কোনো কোনো সাংবাদিক পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে নানা অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন৷ তারা সাংবাদিকতার পরিবেশ নষ্ট করছেন৷ আবার সাংবাদিকদের মালিক পক্ষ বিজ্ঞাপনের জন্য কাজ করাচ্ছে৷ স্থানীয় পর্যায়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকলে তো বিজ্ঞাপন দেয় না৷ সব মিলিয়ে একটা জটিল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে৷
ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের বক্তব্য
কুড়িগ্রামে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যান বলেন, এখন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকতা করা কঠিন হয়ে পড়ছে৷ কোনো প্রতিবেদন পুলিশ বা প্রশাসনের বিরুদ্ধে গেলেই হুমকি, নির্যাতন বা মামলার শিকার হতে হচ্ছে৷
তিনি বলেন, প্রেসক্লাব বা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতাদের বড় একটি অংশ এখন পুলিশ ও প্রশাসনের সুবিধাভোগী৷ ফলে তারা তো অনিয়ম, দুর্নীতির খবর প্রকাশ করেনই না, উপরন্তু কেউ ওই ধরনের খবর প্রকাশ করে হামলা মামলার শিকার হলে তারা প্রতিবাদও করেন না৷ কেউ প্রতিবাদ করলে তাকেও একই পরিণতির শিকার হতে হয়৷ যার বড় প্রমাণ আমি নিজে৷
খুলনার আরেকজন নির্যাতিত সাংবাদিক রকিবউদ্দির পান্নু বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে সাংবাদিকতা অনেক ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে উঠছে৷ কারণ পুলিশ প্রশাসন চায় না তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হোক৷
প্রকাশের আগেই তারা নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে৷ আর প্রকাশ হলে মামলায় জড়িয়ে দেয়৷ সেই মামলা প্রকাশিত খবর নিয়ে নয়, মামলা করা হয় চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে৷ তাদের লোকেরাই সাজানো মামলা করে৷ জিজিটাল নিরাপত্তা আইন তো আছেই৷
তিনিও মনে করেন, এইসব মামলা বা হয়রানির তেমন প্রতিবাদ না হওয়ার কারণ স্থানীয় প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নে নানা ধরনের বিভক্তি৷
এসডব্লিউএসএস/১৩৪৫
আপনার মতামত জানানঃ