গোটা পৃথিবীই রহস্যে ভরা। তেমনই এক রহস্যের নাম বগ বডিস। প্রায় ২০০ বছর আগে খোঁজ মেলে রহস্যময় এই সব দেহের। প্রায় অবিকৃত এই সব দেহ নিয়ে রয়েছে নানা মত।
সম্প্রতি এই রহস্যের বেশ কিছুটা সমধান করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সামনে এসেছে নানা অজানা তথ্য। জানা যায়, জার্মানি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক জায়গা থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই ধরনের দেহের খুঁজে পান ।
১৮৩৫ সালে প্রথম জুটল্যান্ডে এই বগ বডির হদিশ মেলে। সেই দেহ ছিল একজন মহিলার। যার নাম রাখা হয় হারাল্ডকায়র উওম্যান।
কী এই বগ বডি? এই নিয়ে রয়েছে অনেক জল্পনা। সাধারণত এই মৃতদেহগুলি পিট বগের মধ্যে অক্সিজেন এবং পিট শৈবালের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদানের অভাবে এই অবস্থায় পরিণত হয়েছে।
কী এই পিট বগ? পিট বগ হল একটি জলাশয়, যেখানে জলের সঙ্গে মাটির সরাসরি সংযোগ থাকে, অর্থাৎ মাটির ঠিক নীচে জলের অবস্থান হতে হবে। কিন্তু এই জলে খনিজের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। অক্সিজেন কম থাকায় এই আবহাওয়া মৃতদেহগুলিকে পচতে দেয় না।
বহু বছর পরেও এই দেহগুলির তেমন পরিবর্তন হয়নি। তবে কম তাপমাত্রা এবং অ্যাসিড জলে থাকায় শরীরের রং পরিবর্তন হয়েছে। চামড়া ঠিকঠাক থাকলেও, পিট বগ-এ বহুকাল থাকার জন্য হাড়গুলি নষ্ট হয়ে যায় এই দেহগুলির।
প্রত্নতত্ববিদদের দাবি, এই দেহগুলির বেশ কিছু লৌহ যুগের সময়ের। ৮০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পর্যন্ত এই বগ বডিগুলি পাওয়া গিয়েছে।
এ পর্যন্ত খোঁজ পাওয়া প্রাচীনতম বগ বডির নাম দেওয়া হয় কোয়েলবার্জ ম্যান, যা প্রায় ১০ হাজার বছর আগের মেসোলিথিক বা মধ্য প্রস্তর যুগের।
এ ছাড়া প্রথম মাংসল বগ বডি ছিল ব্রোঞ্জ যুগের ক্যাসেল ম্যানের। সর্বশেষ আবিষ্কৃত বগ বডির খোঁজ মেলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার সৈনিকদের, যারা রাশিয়ার যুদ্ধে মারা যান।
কিন্তু কেন, কী ভাবে প্রাচীনকালে এদের মৃত্যু হয়েছিল? তা নিয়ে রয়েছে অনেক বিতর্ক। তবে বেশির ভাগের মতে, ধার্মিক কোনও অনুষ্ঠানে বলি দেওয়া হয়েছিল এদের। কেউ আবার বলেন, এদের খুন করা হয়েছিল।
পরবর্তী কালে এই বগ বডিস নিয়ে প্রচুর পরীক্ষার পর জানা গিয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খুন অথবা নৃশংস হত্যার শিকার হয়েছিল এরা।
এই বগ বডিগুলির বেশির ভাগই মিলেছে গলায় দড়ি জড়ানো অবস্থায়। বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন রয়েছে গোটা শরীরে।
এমনই কিছু বগ বডিকে পৃথিবীর বিভিন্ন সংগ্রহশালায় রাখা হয়েছে এবং তাদের নিয়ে নানা পরীক্ষাও চলছে। চেষ্টা করা হচ্ছে এদের ডিএনএ ব্যবহার করে নানা পরীক্ষা করার। তবে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি এখনও।
ডেনমার্কের স্লিকবর্গ মিউজিয়ামের এমনই একটি বগ বডি রয়েছে যার নাম টোলাডস্ ম্যান। এই মৃতদেহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ফাঁসি দেওয়া কারও বলে অনুমান।
আয়ারল্যান্ডের ন্যাশনাল মিউজিয়ামে রাখা রয়েছে আরও একটি বগ বডি ওল্ডক্রঘান ম্যান। তার দেহের বৈশিষ্ট দেখে বোঝা যায় যে, ইনি ‘উচ্চবংশীয়’ ছিলেন।
ডেনমার্কের মইসগার্ড মিউজিয়ামে রাখা আছে গ্রাউবালে ম্যানকে এবং পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গিয়েছে তাকে বিষ দিয়ে খুন করা হয়েছিল।
এ ছাড়া নেদারল্যান্ডসের দ্রেন্তস মিউজিয়ামে রাখা রয়েছে ইয়েদি গার্ল, যাকে তার আগুনের মতো চুলের জন্য ‘ডাইনি’ ভেবে ভয় পেয়েছিল অনেকেই।
এসডব্লিউএসএস/১৩০৫
আপনার মতামত জানানঃ